পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৬২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

\ЭФ o রবীন্দ্র-রচনাবলী দগ্ধ করিতে লাগিল । এই সংকট হইতে উদ্ধারের যে পথ কোথায় তাহা স্বচরিতা কোনোমতেই ভাবিয়া পাইল না । এ দিকে স্বচরিতার শীঘ্র বিবাহ দিয়া ফেলিবার জন্য বরদাসুন্দরী পরেশবাবুকে অত্যন্ত পীড়াপীড়ি করিতে লাগিলেন । তিনি কহিলেন, “স্বচরিতার দায়িত্ব আর আমাদের বহন করা চলে না, সে এখন নিজের মতে চলতে আরম্ভ করেছে। তার বিবাহের যদি দেরি থাকে তা হলে মেয়েদের নিয়ে আমি অন্য কোথাও যাব— স্বচরিতার অদ্ভুত দৃষ্টান্ত মেয়েদের পক্ষে বড়োই অনিষ্টের কারণ হচ্ছে। দেখো এর জন্যে পরে তোমাকে অমৃতাপ করতে হবেই। ললিতা আগে তো এ-রকম ছিল না ; এখন ও যে আপন ইচ্ছামত যা খুশি একটা কাণ্ড করে বলে, কাকেও মানে না, তার মূলে কে ? সেদিন যে ব্যাপারটা বাধিয়ে বলল, যার জন্তে আমি লজ্জায় মরে যাচ্ছি, তুমি কি মনে কর তার মধ্যে স্বচরিতার কোনো হাত ছিল না ? তুমি নিজের মেয়ের চেয়ে স্বচরিতাকে বরাবর বেশি ভালোবাস তাতে আমি কোনোদিন কোনো কথা বলি নি, কিন্তু আর চলে না, সে আমি স্পষ্টই বলে রাখছি।” স্বচরিতার জন্য নহে, কিন্তু পারিবারিক অশাস্তির জন্য পরেশবাবু চিন্তিত হইয়া পড়িয়াছিলেন । বরদাসুন্দরী যে উপলক্ষ্যটি পাইয়া বসিয়াছেন ইহা লইয়া তিনি যে হুলস্থূল কাণ্ড বাধাইয়া বসিবেন এবং যতই দেখিবেন, আন্দোলনে কোনো ফল হইতেছে না ততই দুর্বার হইয়া উঠিতে থাকিবেন, ইহাতে র্তাহার কোনো সন্দেহ ছিল না। যদি সুচরিতার বিবাহ সত্বর সম্ভবপর হয় তবে বর্তমান অবস্থায় স্বচরিতার পক্ষেও তাহ শাস্তিজনক হইতে পারে তাহাতে সন্দেহ নাই । তিনি বরদা সুন্দরীকে বলিলেন, “পাল্লুবাবু যদি স্বচরিতাকে সম্মত করতে পারেন তা হলে আমি বিবাহ সম্বন্ধে কোনো আপত্তি করব না ।” বরদাসুন্দরী কহিলেন, “আবার কতবার করে সম্মত করতে হবে ? তুমি তো অবাক করলে ! এত সাধাসাধিই বা কেন ? পাহবাবুর মতো পাত্র উনি পাবেন কোথায় তাই জিজ্ঞাসা করি । তুমি রাগ কর আর ঘাই কর সত্যি কথা বলতে কি, স্বচরিতা পাহবাবুর যোগ্য মেয়ে নয় ।” পরেশবাবু কহিলেন, “পাল্লুবাবুর প্রতি স্বচরিতার মনের ভাব যে কী তা আমি স্পষ্ট করে বুঝতে পারি নি। অতএব তারা নিজেদের মধ্যে যতক্ষণ কথাটা পরিস্কার করে না নেবে ততক্ষণ আমি এ বিষয়ে কোনো প্রকার হস্তক্ষেপ করতে পারব न] * বরদাসুন্দরী কহিলেন, “বুঝতে পার নি! এত দিন পরে স্বীকার করলে ! ওই