পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৬৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

○○8 রবীন্দ্র-রচনাবলী না । যে ললিতা তাহার সম্বন্ধে আজকাল এমন প্রখর ভাবে প্ৰগলভা হইয়া উঠিয়াছে সে আজ বিনয়ের কাছে এমন সংকুচিত ইহা দেখিয়া তিনি মনে মনে জলিতে লাগিলেন এবং ব্রাহ্মসমাজের বাহিরের লোকের সহিত কন্যাদের অবাধ পরিচয়ের অবকাশ দিয়া পরেশবাবু যে নিজের পরিবারকে কিরূপ কদাচারের মধ্যে লইয়া যাইতেছেন তাহা মনে করিয়া পরেশবাবুর প্রতি তাহার ঘৃণা আরও বাড়িয়া উঠিল এবং পরেশবাবুকে যেন এক দিন এজন্য বিশেষ অনুতাপ করিতে হয় এই কামনা তাহার মনের মধ্যে অভিশাপের মতো জাগিতে লাগিল । অনেক ক্ষণ এইভাবে চলিলে পর স্পষ্টই বুঝা গেল হারানবাবু উঠিবেন না। তখন স্বচরিতা বিনয়কে কহিল, "মাসির সঙ্গে অনেক দিন আপনার দেখা হয় নি। তিনি আপনার কথা প্রায়ই জিজ্ঞাসা করেন । এক বার তার সঙ্গে দেখা করতে পারেন না ?” বিনয় চৌকি হইতে উঠিয়া দাড়াইয়া কহিল, "মাসির কথা আমার মনে ছিল না এমন অপবাদ আমাকে দেবেন না ।” স্বচরিতা যখন বিনয়কে তাহার মাসির কাছে লইয়া গেল তখন ললিতা উঠিয়া কহিল, “পামুবাবু, আমার সঙ্গে আপনার বোধ হয় বিশেষ কোনো প্রয়োজন নেই।” হারানবাবু কহিলেন, “না । তোমার বোধ হয় অন্যত্র বিশেষ প্রয়োজন আছে । তুমি যেতে পারে।” ললিত কথাটার ইঙ্গিত বুঝিতে পারিল । সে তৎক্ষণাং উদ্ধত ভাবে মাথা তুলিয়া ইঙ্গিতকে স্পষ্ট করিয়া দিয়া কছিল, “বিনয়বাবু আজ অনেক দিন পরে এসেছেন, তার সঙ্গে গল্প করতে যাচ্ছি । ততক্ষণ আপনি নিজের লেখ যদি পড়তে চান তা হলে— ন}, ওই যা, সে কাগজখানা দিদি দেখছি কুটি কুটি করে ফেলেছেন । পরের লেখা যদি সহ করতে পারেন তা হলে এইগুলি দেখতে পারেন ।” বলিয়া কোণের টেবিল হইতে সযত্বরক্ষিত গোরার রচনাগুলি আনিয়া হারানবাবুর সম্মুখে রাখিয়া দ্রুতপদে ঘর হইতে বাহির হইয়া গেল । হরিমোহিনী বিনয়কে পাইয়া অত্যস্ত আনন্দ অনুভব করিলেন । কেবল যে এই প্রিয়দর্শন যুবকের প্রতি স্নেহবশত তাহা নহে। এ বাড়িতে বাহিরের লোক যে-কেহ হরিমোহিনীর কাছে আসিয়াছে সকলেই তাহাকে যেন কোনো এক ভিন্ন শ্রেণীর প্রাণীর মতো দেখিয়াছে । তাহারা কলিকাতার লোক, প্রায় সকলেই ইংরেজি ও বাংলা লেখাপড়ায় তাহার অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ— তাহাদের দূরত্ব ও অবজ্ঞার আঘাতে তিনি অত্যন্ত সংকুচিত হইয়া পড়িতেছিলেন । বিনয়কে তিনি আশ্রয়ের মতো