পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৭৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গোরা \ల&(t স্বচরিতা নিজেই এ কথা কয়েক দিন হইতে ভাবিতেছিল। এ বাড়িতে বাস করা যে তাহার মাসির পক্ষে অপমান তাহা সে অনুভব করিয়াছিল, সুতরাং সে কোনো উত্তর দিতে পারিল না। চুপ করিয়া তাহার কাছে গিয়া বসিয়া রহিল। রাত্রি হইয়াছে। ঘরে প্রদীপ জালা হয় নাই । কলিকাতার হেমস্তের অস্বচ্ছ আকাশে তারাগুলি বাষ্পাচ্ছন্ন । কাহাদের চোখ দিয়া জল পড়িতে লাগিল তাহা সেই অন্ধকারে দেখা গেল না । সিঁড়ি হইতে সতীশের উচ্চকণ্ঠে মালিমা ধ্বনি শুনা গেল। "কী বাবা, এস বাবা” বলিয়া হরিমোহিনী তাড়াতাড়ি উঠিয়া পড়িলেন । স্বচরিতা কহিল, "মাসিমা, আজ রাত্রে কোথাও যাওয়া হতেই পারে না, কাল সকালে সমস্ত ঠিক করা যাবে। বাবাকে ভালো করে না বলে তুমি কী করে যেতে পারবে বলে । সে যে বড়ো অস্তায় হবে ।” বিনয় বরদাসুন্দরী-কর্তৃক হরিমোহিনীর অপমানে উত্তেজিত হইয়া এ কথা ভা নাই । সে স্থির করিয়াছিল এক রাত্রিও মাসির এ বাড়িতে থাকা উচিত হইবে না— এবং আশ্রয়ের অভাবেই যে হরিমোহিনী সমস্ত সহ করিয়া এ বাড়িতে রহিয়াছেন বরদাস্বন্দরীর সেই ধারণা দূর করিবার জন্ত বিনয় হরিমোহিনীকে এধান হইতে লইয়। যাইতে লেশমাত্র বিলম্ব করিতে চাহিতেছিল না। স্বচরিতার কথা শুনিয়া বিনয়ের হঠাৎ মনে পড়িয়া গেল যে, এ বাড়িতে বরদাসুন্দরীর সঙ্গেই যে হরিমোহিনীর একমাত্র এবং সর্বপ্রধান সম্বন্ধ তাহা নহে। যে ব্যক্তি অপমান করিয়াছে তাহাকেই বড়ো করিয়া দেখিতে হইবে আর যে লোক উদারভাবে আত্মীয়ের মতো আশ্রয় দিয়াছে তাহাকে ভুলিয়া যাইতে হুইবে এ তো ঠিক নহে । বিনয় বলিয়া উঠিল, “সে ঠিক কথা। পরেশবাবুকে না জানিয়ে কোনোমতেই ধাওয়া যায় না ।” সতীশ আসিয়াই কহিল, "মালিমা, জান রাশিয়ানরা ভারতবর্ষ আক্রমণ করতে আসছে ? ভারি মজা হবে ।” বিনয় জিজ্ঞাসা করিল, “তুমি কার দলে ?” সতীশ কহিল, “আমি রাশিয়ানের দলে ।” বিনয় কহিল, “তা হলে রাশিয়ানের আর ভাবনা নেই।” এইরূপে সতীশ মালিমার সভা জমাইয়া তুলিতেই স্বচরিত আস্তে আস্তে সেখান হইতে উঠিয়া নীচে চলিয়া গেল । স্বচরিতা জানিত, শুইতে যাইবার পূর্বে পরেশবাবু তাহার কোনো একটি প্রিয় বই খানিকটা করিয়া পড়িতেন । কতদিন এইরূপ সময়ে স্বচরিতা তাহার কাছে