পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৭৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রবীন্দ্র-রচনাবলী واسون (ما আসিয়া বলিয়াছে এবং স্বচরিতার অনুরোধে পরেশবাৰু তাহাকেও পড়িয়া শুনাইয়াছেন । আজও তাহার নির্জন ঘরে পরেশবাবু আলোটি জালাইয়া এমার্সনের গ্রন্থ পড়িতেছিলেন । স্বচরিতা ধীরে ধীরে তাহার পাশে চৌকি টানিয়া লইয়া বসিল । পরেশবাবু বইখানি রাখিয়া এক বার তাহার মুখের দিকে চাহিলেন। স্বচরিতার সংকল্প ভঙ্গ হইল— সে সংসারের কোনো কথাই তুলিতে পারিল না। কহিল, "বাবা, আমাকে পড়ে শোনাও।” পরেশবাবু তাহাকে পড়িয়া বুঝাইয়া দিতে লাগিলেন। রাত্রি দশটা বাজিয়া গেলে পড়া শেষ হইল। তখনো স্বচরিত নিদ্রার পূর্বে পরেশবাবুর মনে কেনোপ্রকার ক্ষোভ পাছে জন্মে এইজন্য কোনো কথা না বলিয়া ধীরে ধীরে চলিয়া যাইতেছিল । পরেশবাবু তাহাকে স্নেহস্বরে ডাকিলেন, “রাধে!” সে তখন ফিরিয়া আসিল । পরেশবাবু কহিলেন, “তুমি তোমার মাসির কথা আমাকে বলতে এসেছিলে ?” পরেশবাবু তাহার মনের কথা জানিতে পারিয়াছেন জানিয়া স্বচরিতা বিম্মিত হইয়া বলিল, “হা বাবা, কিন্তু আজ থাক, কাল সকালে কথা হবে ।” পরেশবাবু কহিলেন, “বসে।” সুচরিতা বসিলে তিনি কহিলেন, “তোমার মাসির এখানে কষ্ট হচ্ছে সে কথা আমি চিন্তা করেছি । তার ধর্মবিশ্বাস ও আচরণ লাবণ্যর মার সংস্কারে যে এত বেশি আঘাত দেবে তা আমি আগে ঠিক জানতে পারি নি। যখন দেখছি তাকে পীড়া দিচ্ছে তখন এ বাড়িতে তোমার মাসিকে রাখলে তিনি সংকুচিত হয়ে থাকবেন ।” সুচরিতা কহিল, “আমার মাসি এখান থেকে যাবার জন্যেই প্রস্তুত হয়েছেন।” পরেশবাবু কহিলেন, “আমি জানতুম যে তিনি যাবেন । তোমরা দুজনেই তার একমাত্র আত্মীয়— তোমরা তাকে এমন অনাথার মতো বিদায় দিতে পারবে না সেও আমি জানি । তাই আমি এ কয়দিন এ সম্বন্ধে ভাবছিলুম।” তাহার মাসি কী সংকটে পড়িয়াছেন পরেশবাবু যে তাহা বুঝিয়াছেন ও তাহা লইয়া ভাবিতেছেন এ কথা স্বচরিতা একেবারেই অনুমান করে নাই। পাছে তিনি জানিতে পারিয়া বেদনা বোধ করেন এই ভয়ে সে এতদিন অত্যস্ত সাবধানে চলিতেছিল— আজ পরেশবাবুর কথা শুনিয়া সে আশ্চর্য হইয়া গেল এবং তাহার চোখের পাতা ছলছল করিয়া আসিল ।