পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৮২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

'ථඳ ෆ রবীন্দ্র-রচনাবলী "মালি, মা এসেছেন তোমাকে নেবার জন্তে” বলিয়া বিনয় আসিয়া উপস্থিত হইল । স্বচরিতা উঠিয়া পড়িয়া ব্যস্ত হইয়া কহিল, “কোথায় তিনি ?” বিনয় কহিল, “নীচে আপনার মার কাছে বসে আছেন।” স্বচরিত তাড়াতাড়ি নীচে চলিয়া গেল । পরেশবাবু হরিমোহিনীকে কহিলেন, “আমি আপনার বাড়িতে জিনিসপত্র সমস্ত গুছিয়ে দিয়ে আসি গে।” পরেশবাবু চলিয়া গেলে বিস্মিত বিনয় কহিল, “মালি, তোমার বাড়ির কথা তো জানতুম না।” হরিমোহিনী কছিলেন, “আমিও যে জানতুম না বাবা! জানতেন কেবল পরেশবাবু। আমাদের রাধারানীর বাড়ি ।” বিনয় সমস্ত বিবরণ শুনিয়া কহিল, "ভেবেছিলুম পৃথিবীতে বিনয় এক জন কারও একটা কোনো কাজে লাগবে । তাও ফসকে গেল । এপর্যস্ত মায়ের তো কিছুই করতে পারি নি, যা করবার সে তিনিই আমার করেন— মাসিরও কিছু করতে পারব না, তার কাছ থেকেই আদায় করব । আমার ওই নেবারই কপাল, দেবার নয় ।” কিছুক্ষণ পরে ললিতা ও সুচরিতার সঙ্গে আনন্দময়ী আসিয়া উপস্থিত হইলেন । হরিমোহিনী অগ্রসর হইয়া গিয়া কহিলেন, “ভগবান যখন দয়া করেন তখন আর কৃপণতা করেন না— দিদি, তোমাকেও আজ পেলুম।” বলিয়া হাত ধরিয়া তাহাকে আনিয়া মাদুরের পরে বসাইলেন । হরিমোহিনী কছিলেন, "দিদি, তোমার কথা ছাড়া বিনয়ের মুখে আর কোনো কথা নেই ।” আনন্দময়ী হাসিয়া কহিলেন, "ছেলেবেলা থেকেই ওর ওই রোগ, যে কথা ধরে সে কথা শীঘ্র ছাড়ে না শীঘ্র মাসির পালাও শুরু হবে ।” বিনয় কহিল, “তা হবে, সে আমি আগে থাকতেই বলে রাখছি । আমার অনেক বয়সের মাসি, নিজে সংগ্রহ করেছি, এতদিন ষে বঞ্চিত ছিলুম নানারকম করে সেটা পুষিয়ে নিতে হবে ।” আনন্দময়ী ললিতার দিকে চাহিয়া সহাস্তে কহিলেন, “আমাদের বিনয় ওর বা অভাব তা সংগ্রহ করতেও জানে আর সংগ্রহ করে প্রাণমনে তার আদর করতেও জানে। তোমাদের ও যে কী চোখে দেখেছে সে আমিই জানি— যা কখনো ভাবতে পারত না তারই যেন হঠাৎ সাক্ষাং পেয়েছে। তোমাদের সঙ্গে ওদের জানাশোনা