পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৯৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রবীন্দ্র-রচনাবলী 8 לס ললিতা অভিমানিনী মেয়ে ; সে অন্য পক্ষে অনিচ্ছার লেশমাত্র লক্ষণ দেখিলে জেদ করিতে বা কারণ জিজ্ঞাসা করিতে পারেই না । সে কহিল, "যদি অসুবিধা হয় তা হলে কাজ কী !” ললিতা ইহার পরে যে বাড়িতে গেল সেখানে স্পষ্ট কথাই শুনিতে পাইল । তাহারা কহিল, “স্বচরিতা আজকাল হিন্দু হইয়াছে, সে জাত মানে, তাহার বাড়িতে ঠাকুরপূজা হয়, ইত্যাদি ।” ললিত কহিল, “সেজন্য যদি আপত্তি থাকে তবে নাহয় আমাদের বাড়িতেই ইস্কুল বসবে ।” কিন্তু ইহাতেও আপত্তির খণ্ডন হইল না, আরও একট-কিছু বাকি আছে । ললিত অন্য বাড়িতে না গিয়া সুধীরকে ডাকাইয় পাঠাইল । জিজ্ঞাসা করিল, “সুধীর, কী হয়েছে সত্য করে বলে তো " স্বধীর কছিল, “পাল্লুবাবু তোমাদের এই ইস্কুলের বিরুদ্ধে উঠে-পড়ে লেগেছেন।" ললিতা জিজ্ঞাসা করিল, "কেন, দিদির বাড়িতে ঠাকুরপুজো হয় ব’লে ?” সুধীর কহিল, “শুধু তাই নয়।” ললিতা অধীর হইয়া কহিল, “আর কী, বলোই-ন৷ ” সুধীর কহিল, “সে অনেক কথা ।” ললিত কহিল, “আমারও অপরাধ আছে বুঝি ?” সুধীর চুপ করিয়া রহিল। ললিতা মুখ লাল করিয়া বলিল, “এ আমার সেই স্টিমরি-যাত্রার শাস্তি ! যদি অবিবেচনার কাজ করেই থাকি তবে ভালো কাজ করে প্রায়শ্চিত্ত করার পথ আমাদের সমাজে একেবারেই বন্ধ বুঝি ! আমার পক্ষে সমস্ত শুভকর্ম এ সমাজে নিষিদ্ধ ? আমার এবং আমাদের সমাজের আধ্যাত্মিক উন্নতির এই প্রণালী তোমরা ঠিক করেছ।” স্বধীর কথাটাকে একটু নরম করিবার জন্য কহিল, “ঠিক সেজন্তে নয়। বিনয়বাবুরা পাছে ক্রমে এই বিদ্যালয়ের সঙ্গে জড়িত হয়ে পড়েন ওঁর। সেই ভয় করেন।” ললিতা একেবারে আগুন হইয়| কহিল, “সে ভয়, না সে ভাগ্য ! যোগ্যতায় বিনয়বাবুর সঙ্গে তুলনা হয় এমন লোক ওঁদের মধ্যে কজন আছে!" সুধীর ললিতার রাগ দেখিয়! সংকুচিত হইয়া কছিল, “সে তে ঠিক কথা । কিন্তু বিনয়বাবু তো—” ললিতা । ব্রাহ্মসমাজের লোক নন ! সেই জন্তে ব্রাহ্মসমাজ তাকে দণ্ড দেবেন। এমন সমাজের জন্তে আমি গৌরব বোধ করি নে।