পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৯৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গোর। ©bጫ নিম্পত্তি হইবে না । নিজের কাগুজ্ঞানহীন স্বামীর উপর তাহার সমস্ত রাগ গিয়া পড়িল । এই অবোধ লোকটিকে লইয়া ঘরকন্না করা স্ত্রীলোকের পক্ষে কী বিড়ম্বনা ! ললিতা হৃদয়-ভরা প্ৰলয়ঝড় বহন করিয়া লইয়া চলিয়া গেল । নীচের ঘরে বসিয়া পরেশবাৰু চিঠি লিখিতেছিলেন, সেখানে গিয়াই একেবারে তাহাকে জিজ্ঞাসা করিল, “বাবা, বিনয়বাৰু কি আমাদের সঙ্গে মেশবার যোগ্য নন ?” প্রশ্ন শুনিয়াই পরেশবাবু অবস্থাটা বুঝিতে পারিলেন । তাহার পরিবার লইয়া সম্প্রতি র্তাহাদের সমাজে যে আন্দোলন উপস্থিত হইয়াছে তাহা পরেশবাবুর অগোচর ছিল না । ইহা লইয়া তাহাকে যথেষ্ট চিস্তা করিতেও হইতেছে । বিনয়ের প্রতি ললিতার মনের ভাব সম্বন্ধে যদি তাহার মনে সন্দেহ উপস্থিত না হইত তবে তিনি বাহিরের কথায় কিছুমাত্র কান দিতেন না । কিন্তু যদি বিনয়ের প্রতি ললিতার অনুরাগ জন্মিয়া থাকে তবে সে স্থলে তাহার কর্তব্য কী সে প্রশ্ন তিনি বারবার নিজেকে জিজ্ঞাসা করিয়াছেন । প্রকাশুভাবে ব্রাহ্মধর্মে দীক্ষণ লওয়ার পর তাহার পরিবারে আবার এই একটা সংকটের সময় উপস্থিত হইয়াছে । সেইজন্ত এক দিকে একটা ভয় এবং কষ্ট তাহাকে ভিতরে ভিতরে পীড়ন করিতেছে, অন্ত দিকে র্তাহার সমস্ত চিত্তশক্তি জাগ্রত হইয়া উঠিয়া বলিতেছে, ‘ব্রাহ্মধর্ম গ্রহণের সময় যেমন একমাত্র ঈশ্বরের দিকে দৃষ্টি রাখিয়াই কঠিন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হইয়াছি, সত্যকেই স্বথ সম্পত্তি সমাজ সকলের উর্ধ্বে স্বীকার করিয়া জীবন চিরদিনের মতো ধন্ত হইয়াছে, এথনো যদি সেইরূপ পরীক্ষার দিন উপস্থিত হয় তবে তাছার দিকেই লক্ষ রাখিয়া উত্তীর্ণ হইব ।’ ললিতার প্রশ্নের উত্তরে পরেশবাবু কহিলেন, “বিনয়কে আমি তো খুব ভালো বলেই জানি । তার বিস্তাবুদ্ধিও যেমন চরিত্রও তেমনি ।” একটুখানি চুপ করিয়া থাকিয়া ললিত কহিল, "গৌরবাবুর মা এর মধ্যে দুদিন আমাদের বাড়ি এসেছিলেন । সুচিদিদিকে নিয়ে তার ওখানে আজ একবার যাব ?” পরেশবাবু ক্ষণকালের জন্য উত্তর দিতে পারিলেন না। তিনি নিশ্চয় জানিতেন বর্তমান আলোচনার সময় এইরূপ যাতায়াতে তাহদের নিন্দ আরও প্রশ্রয় পাইবে । কিন্তু তাহার মন বলিয়া উঠিল, "যতক্ষণ ইহা অন্যায় নহে ততক্ষণ আমি নিষেধ করিতে পারিব না ’ কছিলেন, “আচ্ছা যাও । আমার কাজ আছে, নইলে আমিও তোমাদের সঙ্গে বেতুম।”