পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪০৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গোরা లవరీ শেষকালে পাহুবাবুরই জিত হইবে এবং অন্তায়ের কাছে নিঃশব্দে হার মানিতে হইবে, ললিতার পক্ষে এমন দুঃখ আর-কিছুই নাই । এ সম্বন্ধে তাহার বাপ ছাড়া আর-কাহারও শাসন সে এক মুহূর্ত বহন করিতে পারিত না । সে কোনো অপ্রিয়তাকে ডরায় না, কিন্তু অন্যায়কে কেমন করিয়া সহ করিবে ! ধীরে ধীরে পরেশবাবুর কাছ হইতে সে উঠিয়া গেল । নিজের ঘরে গিয়া দেখিল তাহার নামে ভাকে একখানা চিঠি আসিয়াছে। হাতের অক্ষর দেখিয়া বুঝিল তাহার বাল্যবন্ধু শৈলবালার লেখা । সে বিবাহিত, তাহার স্বামীর সঙ্গে বাকিপুরে থাকে। চিঠির মধ্যে ছিল— ‘তোমাদের সম্বন্ধে নানা কথা শুনিয়া মন বড়ো খারাপ ছিল । অনেক দিন হইতে ভাবিতেছি চিঠি লিথিয়া সংবাদ লইব— সময় হইয় উঠে নাই । কিন্তু পরশু এক জনের কাছ হইতে ( তাহার নাম করিব না ) যে খবর পাইলাম শুনিয়া যেন মাথায় বজ্ৰাঘাত হইল। এ যে সম্ভব হইতে পারে তাহা মনেও করিতে পারি না । কিন্তু যিনি লিথিয়াছেন তাহাকে অবিশ্বাস করাও শক্ত। কোনো হিন্দু যুবকের সঙ্গে নাকি তোমার বিবাহের সম্ভাবনা ঘটিয়াছে । এ কথা যদি সত্য হয়? ইত্যাদি ইত্যাদি । ক্রোধে ললিতার সর্বশরীর জলিয়া উঠিল । সে এক মুহূর্ত অপেক্ষা করিতে পারিল না। তখনই সে চিঠির উত্তরে লিখিল— খবরটা সত্য কিনা ইহা জানিবার জন্ত তুমি যে আমাকে প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করিয়া পাঠাইয়াছ ইহাই আমার কাছে আশ্চর্য বোধ হইতেছে। ব্রাহ্মসমাজের লোক তোমাকে যে খবর দিয়াছে তাহার সত্যও কি যাচাই করিতে ছইবে! এত অবিশ্বাস! তাহার পরে, কোনো হিন্দু যুবকের সঙ্গে আমার বিবাহের সম্ভাবনা ঘটিয়াছে সংবাদ পাইয়া তোমার মাথায় বজ্রাঘাত হইয়াছে, কিন্তু আমি তোমাকে নিশ্চয় বলিতে পারি ব্রাহ্মসমাজে এমন স্ববিখ্যাত সাধু যুবক আছেন যাহার সঙ্গে বিবাহের আশঙ্কা বজ্রাঘাতের তুল্য নিদারুণ এবং আমি এমন দুই-একটি হিন্দু যুবককে জানি র্যাহাদের সঙ্গে বিবাহ ষে কোনো ব্রাহ্মকুমারীর পক্ষে গৌরবের বিষয় । ইহার বেশি আর একটি কথাও আমি তোমাকে বলিতে ইচ্ছা করি না।’ এ দিকে সেদিনকার মতো পরেশবাবুর কাজ বন্ধ হইয়া গেল। তিনি চুপ করিয়া বসিয়া অনেকক্ষণ চিন্তা করিলেন । তাহার পরে ভাবিতে ভাবিতে ধীরে ধীরে স্বচরিতার ঘরে গিয়া উপস্থিত হইলেন। পরেশের চিস্তিত মুখ দেখিয়া স্বচরিতার