পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪১২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ĝo o রবীন্দ্র-রচনাবলী কানে স্মরণ করাইয়া দিবার উদ্দেশ্যটা যে কী তাহা স্বচরিতা ঠিক ঠাওরাইয়াছিল । এমন-সকল গভীর মনের অভিপ্রায় সংসারে যে এত সহজে ধরা পড়িয়া যায়, বেচারা সতীশের তাহা জানা ছিল না ! 8Գ চারি দিন পরে একখানি চিঠি হাতে করিয়া হারানবাবু বরদাস্বন্দরীর কাছে আসিয়া উপস্থিত হইলেন । আজকাল পরেশবাবুর আশা তিনি একেবারেই পরিত্যাগ করিয়াছেন । হারানবাবু চিঠিখানি বরদাসুন্দরীর হাতে দিয়া কহিলেন, “আমি প্রথম হতেই আপনাদের সাবধান করে দিতে অনেক চেষ্টা করেছি। সেজন্যে আপনাদের অপ্রিয়ও হয়েছি। এখন এই চিঠি থেকেই বুঝতে প রবেন ভিতরে ভিতরে ব্যাপারটা কতদূর এগিয়ে পড়েছে।” শৈলবালাকে ললিতা যে চিঠি লিখিয়াছিল সেই চিঠিখানি বরদাসুন্দরী পাঠ করিলেন । কহিলেন, “কেমন করে জানব বলুন । কথনে যা মনেও করতে পারি নি তাই ঘটছে। এর জন্তে কিন্তু আমাকে দোষ দেবেন না তা আমি বলে রাখছি । সুচরিতাকে যে আপনারা সকলে মিলে বডেড ভালো ভালো করে একেবারে তার মাথ। ঘুরিয়ে দিয়েছেন— ব্রাহ্মসমাজে অমন মেয়ে আর হয় না— এখন আপনাদের ওই আদর্শ ব্রাহ্ম মেয়েটির কীর্তি সামলান । বিনয়-গেীরকে তো উনিই এ বাড়িতে এনেছেন । আমি তবু বিনয়কে অনেকটা আমাদের পথেই টেনে আনছিলুম, তার পরে কোথা থেকে উনি ওঁর এক মাসিকে এনে আমাদেরই ঘরে ঠাকুর-পুজো শুরু করে দিলেন । বিনয়কে ও এমনি বিগড়ে দিলেন যে, সে এখন আমাকে দেখলেই পালায় । এখন এ-সব যা-কিছু ঘটছে আপনাদের ওই স্বচরিতাই এর গোড়ায় ও মেয়ে যে কেমন মেয়ে সে আমি বরাবরই জানতুম— কিন্তু কখনো কোনো কথাটি কই নি, বরাবর ওকে এমন করেই মানুষ করে এসেছি যে কেউ টের পায় নি ও আমার আপন মেয়ে নয়— আজ তার বেশ ফল পাওয়া গেল। এখন আমাকে এ চিঠি মিথ্যা দেখাচ্ছেন— আপনার যা হয় করুন ।” হারানবাবু যে এক সময় বরদাসুন্দরীকে ভুল বুঝিয়াছিলেন সে কথা আজ স্পষ্ট স্বীকার করিয়া অত্যস্ত উদারভাবে অনুতাপ প্রকাশ করিলেন। অবশেষে পরেশবাবুকে ডাকিয় আনা হইল । “এই দেখে৷” বলিয়া বরদাসুন্দরী চিঠিখান তাহার সম্মুখে টেবিলের উপর ফেলিয়া