পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪১৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8०२ রবীন্দ্র-রচনাবলী হারান কহিলেন, “বিনয়বাবু ও তোমার সম্বন্ধে সমাজে এই-ষে জনরব রাষ্ট্র হয়েছে এ আমি কোনোমতেই বিশ্বাস করতে পারি নে, কিন্তু তবু তোমার মুখ থেকে আমি এর স্পষ্ট প্রতিবাদ শুনতে চাই ।” ললিতার দুই চক্ষু আগুনের মতো জলিতে লাগিল— সে একটা চৌকির পিঠ কম্পিত হস্তে চাপিয়া ধরিয়া কহিল, “কেন কোনোমতেই বিশ্বাস করতে পারেন না ?” পরেশ ললিতার পিঠে হাত বুলাইয়া কহিলেন, “ললিতা, এখন তোমার মন স্থির নেই, এ কথা পরে আমার সঙ্গে হবে— এখন থাক ?” হারান কছিলেন, “পরেশবাবু, আপনি কথাটাকে চাপা দেবার চেষ্টা করবেন না।” ললিতা পুনর্বার জলিয়া উঠিয়া কছিল, “চাপ দেবার চেষ্টা বাবা করবেন ! আপনাদের মতো বাবা সত্যকে ভয় করেন ন}– সত্যকে বাবা ব্রাহ্মসমাজের চেয়েও বড়ো বলে জানেন । আমি আপনাকে বলছি বিনয়বাবুর সঙ্গে বিবাহকে আমি কিছুমাত্র অসম্ভব বা অন্যায় বলে মনে করি নে ৷” হারান বলিয়া উঠিলেন, “কিন্তু তিনি কি ব্রাহ্মধর্মে দীক্ষা গ্রহণ করবেন স্থির হয়েছে ?” ললিত কহিল, “কিছুই স্থির হয়নি— আর দীক্ষা গ্রহণ করতেই হবে এমনি বা কী কথা আছে !” বরদাসুন্দরী এতক্ষণ কোনো কথা বলেন নাই— তার মনে মনে ইচ্ছা ছিল আজ যেন হারানবাবুর জিত হয় এবং নিজের অপরাধ স্বীকার করিয়া পরেশবাবুকে অনুতাপ করিতে হয়। তিনি আর থাকিতে পারিলেন না ; বলিয়া উঠিলেন, “ললিতা, তুই পাগল হয়েছিল না কি ! বলছিস কী !” ললিত কহিল, “না মা, পাগলের কথা নয়— যা বলছি বিবেচনা করেই বলছি । আমাকে যে এমন করে চার দিক থেকে বধিতে আসবে, সে আমি সহ করতে পারব না— আমি হারানবাবুদের এই সমাজের থেকে মুক্ত হব।” হারান কহিলেন, “উস্তৃম্বলতাকে তুমি মুক্তি বল!” ললিত কহিল, "না, নীচতার আক্রমণ থেকে, অসত্যের দাসত্ব থেকে মুক্তিকেই আমি মুক্তি বলি । যেখানে আমি কোনো অন্যায়, কোনও অধর্ম দেখছি নে সেখানে ব্রাহ্মসমাজ আমাকে কেন স্পর্শ করবে, কেন বাধা দেবে ?” হারান স্পৰ্ধ প্রকাশপূর্বক কহিলেন, “পরেশবাৰু, এই দেখুন। আমি জানতুম শেষকালে এই-রকম একটি কাণ্ড ঘটবে। আমি যতটা পেরেছি আপনাদের সাবধান