পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪১৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8e 8 রবীন্দ্র-রচনাবলী সঙ্গে যখন কোনোদিন আমাদের কিছু অনৈক্য ঘটেছে তিনি কি কখনো একটুও রাগ প্রকাশ করেছেন, ব্রাহ্মসমাজের নামে তাড়া দিয়ে আমাদের মুখ বন্ধ করে দিতে চেষ্টা করেছেন ? এই নিয়ে মা কতদিন বিরক্ত হয়েছেন, কিন্তু বাবার কেবল একটিমাত্র এই ভয় ছিল পাছে আমরা নিজে চিন্তা করবার সাহস হারাই। এমন করে যখন তিনি আমাদের মানুষ করে তুলেছেন তখন শেষকালে কি তিনি পাল্লুবাবুর মতো সমাজের জেল-দারোগার হাতে আমাকে সমর্পণ করে দেবেন ?” স্বচরিতা কহিল, "আচ্ছা বেশ, বাবা যেন কোনো বাধা দিলেন না, তার পরে কী করা যাবে বল ?” ললিত কহিল, “তোমরা যদি কিছু না কর তা হলে আমি নিজে—” স্বচরিতা ব্যস্ত হইয়া উঠিয়া কহিল, "না না, তোকে কিছু করতে হবে না ভাই ! আমি একটা উপায় করছি ।” স্বচরিতা পরেশবাবুর কাছে যাইবার জন্ত প্রস্তুত হইতেছিল, এমন সময় পরেশবাবু স্বয়ং সন্ধ্যাকালে তাহার কাছে আসিয়া উপস্থিত হইলেন। এই সময়ে পরেশবাবু প্রতিদিন তাহার বাড়ির বাগানে একলা মাথা নিচু করিয়া আপন মনে ভাবিতে ভাবিতে পায়চারি করিয়া থাকেন— সন্ধ্যার পবিত্র অন্ধকারটিকে ধীরে ধীরে মনের উপর বুলাইয়া কর্মের দিনের সমস্ত দাগগুলিকে যেন মুছিয়া ফেলেন এবং অস্তরের মধ্যে নির্মল শাস্তি সঞ্চয় করিয়া রাত্রির বিশ্রামের জন্য প্রস্তুত হঠতে থাকেন— আজ পরেশবাবু সেই তাহার সন্ধ্যার নিভৃত ধ্যানের শাস্তিসম্ভোগ পরিত্যাগ করিয়া যখন চিস্তিতমুখে মুচরিতার ঘরে আসিয়া দাড়াইলেন তখন, যে শিশুর খেলা করা উচিত ছিল সেই শিশু পীড়িত হইয়া চুপ করিয়া পড়িয়া থাকিলে মার মনে যেমন ব্যথা বাজে স্বচরিতার স্নেহপূর্ণ চিত্ত তেমনি ব্যথিত হইয়া উঠিল । পরেশবাবু মুহস্বরে কছিলেন, “রাধে, সব শুনেছ তো ?” সুচরিতা কহিল, "ই বাবা, সব শুনেছি, কিন্তু তুমি অত ভাবছ কেন ?" পরেশবাবু কহিলেন, “আমি তো আর কিছু ভাবি নে, আমার ভাবনা এই যে, ললিতা যে ঝড়টা জাগিয়ে তুলেছে তার সমস্ত আঘাত সইতে পারবে তো ? উত্তেজনার মুখে অনেক সময় আমাদের মনে অন্ধ স্পর্ধ আসে, কিন্তু একে একে যখন তার ফল ফলতে আরম্ভ হয় তখন তার ভার বহন করবার শক্তি চলে যায় । ললিতা কি সমস্ত ফলাফলের কথা বেশ ভালো করে চিন্তা করে যেটা তার পক্ষে শ্রেয় সেইটেই স্থির করেছে s" সুচরিতা কহিল, "সমাজের তরফ থেকে কোনো উৎপীড়নে ললিতাকে কোনোদিন