পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪২১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গোরা 86 ఏ আনন্দময়ী কহিলেন, “সে আমি জানি নে, কিন্তু এত বড়ো কথাটা বিনয় কখনোই আমার কাছে লুকিয়ে রাখত না ।” অৰিনাশ যে ব্রাহ্মসমাজের লোকের কাছেই এই সংবাদ শুনিয়াছে, এবং ইহা সম্পূর্ণ বিশ্বাসযোগ্য তাহা সে বার বার করিয়া বলিল। বিনয়ের যে এইরূপ শোচনীয় পরিণাম ঘটিবেই অবিনাশ তাহা বহু পূর্বেই জানিত, এমন-কি, গোরাকে এ সম্বন্ধে সে সতর্ক করিয়া দিয়াছিল ইহাই আনন্দময়ীর নিকট ঘোষণা করিয়া সে মহা আনন্দে নীচের তলায় মহিমের কাছে এই সংবাদ দিয়া গেল । আজ বিনয় যখন আসিল তাহার মুখ দেখিয়াই আনন্দময়ী বুঝিলেন যে, তাহার অস্তঃকরণের মধ্যে বিশেষ একটা ক্ষোত জন্সিয়াছে। তাহাকে আহার করাইয়া নিজের ঘরের মধ্যে ডাকিয়া আনিয়া বলাইলেন। জিজ্ঞাসা করিলেন, “বিনয়, কী হয়েছে তোর বল তো ।” বিনয় কহিল, “ম, এই চিঠিখানা পড়ে দেখো ।” আনন্দময়ীর চিঠি পড়া হইলে বিনয় কহিল, "আজ সকালে পামুবাবু আমার বাসায় এসেছিলেন– তিনি আমাকে খুব ভর্ৎসনা করে গেলেন ।” আনন্দময়ী জিজ্ঞাসা করিলেন, “কেন ?" বিনয় কছিল, “তিনি বলেন, আমার আচরণে তাদের সমাজে পরেশবাবুর মেয়েদের সম্বন্ধে নিন্দার কারণ ঘটেছে।” আনন্দময়ী কছিলেন, "লোকে বলছে ললিতার সঙ্গে তোর বিবাহ স্থির হয়ে গেছে, এতে আমি তো নিন্দার কোনো বিষয় দেখছি নে ৷” বিনয় কহিল, "বিবাহ হবার জে থাকলে নিন্দার কোনো বিষয় থাকত না । কিন্তু যেখানে তার কোনো সম্ভাবনা নেই সেখানে এ-রকম গুজব রটানে কত বড়ো অন্যায় ! বিশেষত ললিতার সম্বন্ধে এ-রকম রটনা করা অত্যন্ত কাপুরুষতা ।” আনন্দময়ী কহিলেন, “তোর যদি কিছুমাত্র পৌরুষ থাকে বিহু, তা হলে এই কাপুরুষতার হাত থেকে তুই অনায়ালেই ললিতাকে রক্ষা করতে পারিস।” বিনয় বিস্থিত হইয়া কহিল, “কেমন করে মা ?” আনন্দময়ী কছিলেন, “কেমন করে কী ! ললিতাকে বিয়ে করে ।” বিনয় কছিল, "কী বল মা ! তোমার বিনয়কে তুমি কী-যে মনে কর তা তো বুঝতে পারি নে। তুমি ভাৰছ বিনয় যদি একবার কেৰল বলে যে ‘আমি বিয়ে করব? তা হলে জগতে:ভার উপরে আর কোনো কথাই উঠতে পারে না ; কেবল আমার ইশারার অপেক্ষাতেই সমস্ত তাকিয়ে বসে আছে।”