পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪২৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8S 8 রবীন্দ্র-রচনাবলী আনন্দময়ী বলিয়াছিলেন, “না না, তার তো কোনো দরকার দেখি নে ৷” বিনয় বলিল, “যদি তারা পীড়াপীড়ি করেন ?” আনন্দময়ী অনেক ক্ষণ চুপ করিয়া থাকিয়া কহিয়াছিলেন, “না, এখানে পীড়াপীড়ি খাটবে না ।” স্বচরিতা আনন্দময়ীর আলোচনায় যোগ দিল না, সে চুপ করিয়াই রহিল। তিনি বুঝিলেন, স্বচরিতার মন এখনো সায় দিতেছে না । , আনন্দময়ী মনে মনে ভাবিতে লাগিলেন, ‘আমার মন যে সমাজের সমস্ত সংস্কার কাটাইয়াছে সে তো কেবল ওই গোরার স্নেহে । তবে কি গোরার পরে স্বচরিতার মন পড়ে নাই ? যদি পড়িত তবে তো এই ছোটো কথাটাই এত বড়ো হইয়া উঠিত না ? আনন্দময়ীর মন একটুখানি বিমর্ষ হইয় গেল । কারাগার হইতে গোরার বাহির হইতে আর দিন দুয়েক বাকি আছে মাত্র । তিনি মনে ভাবিতেছিলেন, তাছার জন্য একটা মুখের ক্ষেত্র প্রস্তুত হইয়া রহিয়াছে । এবারে যেমন করিয়া হোক গোরাকে বাধিতেই হইবে, নহিলে সে ষে কোথায় কী বিপদে পড়িবে তাহার ঠিকানা নাই । কিন্তু গোরাকে বধিয়া ফেলা তো যে সে মেয়ের কর্ম নয় ! এ দিকে, কোনে; হিন্দুসমাজের মেয়ের সঙ্গে গোরার বিবাহ দেওয়া অন্যায় হইবে— সেইজন্য এতদিন নানা কন্যাদয়গ্রস্তের দরখাস্ত একেবারে নামধুর করিয়াছেন । গোরা বলে ‘আমি বিবাহ করিব না”— তিনি ম{ হইয়া এক দিনের জন্ত প্রতিবাদ করেন নাই কঁহাতে লোকে আশ্চর্ষ হইয়া যাইত । এবারে গোরার দু-একটা লক্ষণ দেখিয়া তিনি মনে মনে উৎফুন্ন হষ্টয়াছিলেন। সেইজন্যই স্বচরিতার নীরব বিরুদ্ধতা উহাকে অত্যন্ত আঘাত করিল । কিন্তু তিনি সহজে হাল ছাড়িবার পাত্রী নন ; মনে মনে কহিলেন, “আচ্ছা, দেখা যাক ৷” Qミ পরেশবাবু কছিলেন, “বিনয়, তুমি ললিতাকে একটা সংকট থেকে উদ্ধার করবার জন্তে একটা দুঃসাহসিক কাজ করবে এ-রকম আমি ইচ্ছা করি নে। সমাজের আলোচনার বেশি মূল্য নেই, আজ যা নিয়ে গোলমাল চলছে ছ দিন বাদে তা কারও মনেও থাকবে না ।” ললিতার প্রতি কর্তব্য করিবার জন্যই যে বিনয় কোমর বাধিয়া আসিয়াছিল সে বিষয়ে বিনয়েঃ মনে সন্দেহমাত্র ছিল না । সে জানিত এরূপ বিবাহে সমাজে অন্ধবিধা ঘটবে, এবং তাহার চেয়েও বেশি– গোরা বড়োই রাগ করিবে— কিন্তু