পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪২৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গোরা 8X(t কেবল কর্তব্যবুদ্ধির দোহাই দিয়া এই-সকল অপ্রিয় কল্পনাকে সে মন হইতে খেদাইয় রাখিয়াছিল। এমন সময় পরেশবাবু হঠাৎ যখন কর্তব্যবুদ্ধিকে একেবারে বরখাস্ত করিতে চাহিলেন তখন বিনয় তাহাকে ছাড়িতে চাহিল না । সে কহিল, “আপনাদের স্নেহ-ঋণ আমি কোনোদিন শোধ করতে পারব না। আমাকে উপলক্ষ্য করে আপনাদের পরিবারে দু দিনের জন্যেও যদি লেশমাত্র অশাস্ট্রি ঘটে তবে সেও আমার পক্ষে অসহ ।” পরেশবাবু কহিলেন, “বিনয়, তুমি আমার কথাটা ঠিক বুঝতে পারছ না। আমাদের প্রতি তোমার যে শ্রদ্ধা আছে তাতে আমি খুব খুশি হয়েছি, কিন্তু সেই শ্রদ্ধার কর্তব্য শোধ করবার জন্তেই যে তুমি আমার কন্যাকে বিবাহ করতে প্রস্তুত হয়েছ এটা আমার কন্যার পক্ষে শ্রদ্ধের নয়। সেইজন্যেই আমি তোমাকে বলছিলুম যে, সংকট এমন গুরুতর নয় যে এর জন্তে তোমার কিছুমাত্র ত্যাগ স্বীকার করার প্রয়োজন আছে ।” যাক, বিনয় কর্তব্যদায় হইতে মুক্তি পাইল— কিন্তু খাচার দ্বার খোলা পাইলে পাধি যেমন ঝটুপটু করিয়া উড়িয়া যায় তেমন করিয়া তাহার মন তো নিস্কৃতির অবারিত পথে দৌড় দিল না । এখনো লে যে নড়িতে চায় না । কর্তব্যলুদ্ধিকে উপলক্ষ্য করিয়া সে যে অনেক দিনের সংযমের বাধকে অনাবহুক বলিয়া ভাঙিয়া দিয়া বসিয়া আছে । মন আগে যেখানে ভয়ে ভয়ে পা বাড়াইত এবং অপরাধীর মতো সসংকোচে ফিরিয়| আলিত সেখানে সে যে ঘর জুড়িয়; বসিয় লঙ্কাভাগ করিয়া লষ্টয়াছে— এখন তাহাকে ফেরানো কঠিন । যে কৰ্তব বুদ্ধি তাহাকে হাতে ধরিয়া এ জায়গাটাতে অনিয়াছে সে যখন বলিতেছে ‘আর দরকার নাই, চলো ভাই, ফিরি’— মন বলে, “তোমার দরকার না থাকে তুমি ফেরো, আমি এইখানেই রহিয়া গেলাম ।’ পরেশ যখন কোথাও কোনো আড়াল রাধিতে দিলেন না তখন বিনয় বলিয়া উঠিল, “আমি ম্বে কর্তব্যের অনুরোধে একটা কষ্ট স্বীকার করতে যাচ্ছি এমন কথা মনেও করবেন না। আপনারা যদি সম্মতি দেন তবে আমার পক্ষে এমন সৌভাগ্য আর-কিছুই হতে পারে নী— কেবল আমার ভয় হয় পাছে—” সত্যপ্রিয় পরেশবাবু অসংকোচে কহিলেন, “তুমি যা ভয় করছ তার কোনো হেতু নেই। আমি স্বচরিতার কাছ থেকে শুনেছি ললিতার মন তোমার প্রতি বিমুখ নয়।” বিনয়ের মনের মধ্যে একটা আনন্দের বিদ্যুৎ থেলিয়া গেল। ললিতার মনের একটি গৃঢ় কথা স্বচরিতার কাছে ব্যক্ত হইয়াছে। কবে ব্যক্ত হইল, কেমন করিয়া ব্যক্ত