পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪২৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8〉や রবীন্দ্র-রচনাবলী হইল ? দুই সখীর কাছে এই-যে আভাসে অনুমানে একটা জানাজানি হইয়াছে ইহার স্বতীব্র রহস্যময় মুখ বিনয়কে যেন বিদ্ধ করিতে লাগিল । বিনয় বলিয়া উঠিল, “আমাকে যদি আপনারা যোগ্য মনে করেন তবে তার চেয়ে নন্দের কথা আমার পক্ষে আর-কিছুই হতে পারে না ।” পরেশবাবু কহিলেন, “তুমি একটু অপেক্ষা করো। আমি একবার উপর থেকে আসি ” তিনি বরদাসুন্দরীর মত লইতে গেলেন । বরদাসুন্দরী কহিলেন, “বিনয়কে তো দীক্ষা নিতে হবে ।” পরেশবাবু কহিলেন, "তা নিতে হবে বৈকি।” বরদাসুন্দরী কহিলেন, “সেটা আগে ঠিক করে । বিনয়কে এইখানেই ডাকাও-না।” বিনয় উপরে আসিলে বরদাসুন্দরী কহিলেন, “তা হলে দীক্ষার দিন তো একটা ঠিক করতে হয় ।” বিনয় কহিল, “দীক্ষার কি দরকার আছে ?” বরদাসুন্দরী কহিলেন, “দরকার নেই ! বল কী ! নইলে ব্রাহ্মসমাজে তোমার বিবাহ হবে কী করে ?” বিনয় চুপ করিয়া মাথা হেঁট করিয়া বসিয়া রহিল। বিনয় তাহার ঘরে বিবাহ করিতে সম্মত হইয়াছে শুনিয়াই পরেশবাবু ধরিয়া লইয়াছিলেন যে, সে দীক্ষা গ্রহণ করিয়া ব্রাহ্মসমাজে প্রবেশ করিবে । বিনয় কহিল, “ব্রাহ্মসমাজের ধর্মমতের প্রতি আমার তো শ্রদ্ধা আছে এবং এপর্যন্ত আমার ব্যবহারেও তার অন্যথাচরণ হয় নি । তবে কি বিশেষভাবে দীক্ষা নেওয়ার দরকার আছে ?” বরদাসুন্দরী কছিলেন, “যদি মতেই মিল থাকে তবে দীক্ষা নিতেই বা ক্ষতি কী ?” বিনয় কহিল, “আমি যে হিন্দুসমাজের কেউ নই এ কথা বলা আমার পক্ষে অসম্ভব ।” বরদাসুন্দরী কহিলেন, “তা হলে এ কথা নিয়ে আলোচনা করাই আপনার অন্যায় হয়েছে । আপনি কি আমাদের উপকার করবার জন্তে দয়া করে আমার মেয়েকে বিয়ে করতে রাজি হয়েছেন ?” বিনয় অত্যন্ত আঘাত পাইল ; দেখিল তাহার প্রস্তাবটা ইহাদের পক্ষে সত্যই অপমানজনক হইয়া উঠিয়াছে । কিছুকাল হইল সিভিল বিবাহের আইন পাশ হুইয়া গেছে । সে সময়ে গোরা ও