পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৩৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গোরা 88☾ প্রতি আমার ভক্তি অনেক বেড়ে গেছে ; এতদিন আমি জানতুম উনি অসামান্ত লোক, কিন্তু কাল জানতে পেরেছি উনি মহাপুরুষ । আমরা কাল ওঁকে সম্মান দেখাতে গিয়েছিলুম— উনি ৰে-রকম প্রকাগুভাবে সেই সম্মানকে উপেক্ষা করলেন সে-রকম আজকালকার দিনে ক'জন লোক পারে । এ কি সাধারণ কথা !” একে গোরার মন বিকল হইয়া ছিল, তাহার উপরে অবিনাশের এই উচ্ছাসে তাহার গা জলিতে লাগিল ; সে অসহিষ্ণু হইয়া কহিল, “দেখো অবিনাশ, তোমরা ভক্তির দ্বারাই মাহুষকে অপমান কর— রাস্তার ধীরে আমাকে নিয়ে তোমরা সঙের নাচন নাচাতে চাও সেটা প্রত্যাখ্যান করতে পারি, এতটুকু লজ্জাশরম তোমরা আমার কাছে প্রত্যাশা কর না ! একেই তোমরা বল মহাপুরুষের লক্ষণ ! আমাদের এই দেশটাকে কি তোমরা কেবলমাত্র একটা যাত্রার দল বলে ঠিক করে রেখেছ ? সকলেই প্যাল নেবার জন্তে কেবল নেচে বেড়াচ্ছে! কেউ এতটুকু সত্যকাজ করছে না ! সঙ্গে যোগ দিতে চাও ভালো, ঝগড়া করতে চাও সেও ভালো, কিন্তু দোহাই তোমাদের– অমন করে বাহবা দিয়ো না ।" অবিনাশের ভক্তি আরও চড়িতে লাগিল । সে সহাস্যমুখে উপস্থিত ব্যক্তিবর্গের মুখের দিকে চাহিয়া গোরার বাক্যগুলির চমৎকারিতার প্রতি সকলের মন আকর্ষণ করিবার ভাব দেখাইল । কহিল, “আশীৰ্বাদ করুন, আপনার মতে ওই-রকম নিষ্কামভাবে ভারতবর্ষের সনাতন গৌরব-রক্ষার জন্তে আমরা জীবন সমর্পণ করতে পারি।” এই বলিয়া পায়ের ধুলা লইবার জন্য অবিনাশ হস্ত প্রসারণ করিতেই গোরা সরিয়া গেল । অবিনাশ কছিল, "গৌরমোহনবাবু, আপনি তো আমাদের কাছ থেকে কোনো সম্মান নেবেন না । কিন্তু আমাদের আনন্দ দিতে বিমূখ হলেও চলবে না। আপনাকে নিয়ে এক দিন আমরা সকলে মিলে আহার করব এই আমরা পরামর্শ করেছি— এটিতে আপনাকে সম্মতি দিতেই হবে ।" গোরা কছিল, "আমি প্রায়শ্চিত্ত না করে তোমাদের সকলের সঙ্গে খেতে বলতে পারব না ।” প্রায়শ্চিত্ত ! অবিনাশের দুই চক্ষু দীপ্ত হইয়া উঠিল। সে কহিল, “এ কথা আমাদের কারও মনেও উদয় হয় নি, কিন্তু হিন্দুধর্মের কোনো বিধান গৌরমোহনবাবুকে কিছুতে এড়াতে পারবে না।” সকলে কছিল— তা বেশ কথা। প্রাথশ্চিত্ত উপলক্ষ্যেই সকলে একত্রে আহার করা বাইবে। সেদিন দেশের বড়ো বড়ে অধ্যাপক-পণ্ডিতদের নিমন্ত্ৰণ করিতে হইবে ;