পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৪৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8రిన রবীন্দ্র-রচনাবলী ব’লেই বিনয় গুণটির জন্তে দোহাই পেড়ে গিয়েছেন, নইলে সংসারে হাস্তাম্পদ হতে झङ ।' এমনি করিয়া প্রথম আলাপের সংকোচ কাটিয়া গেল । বিদায় লইবার সময় স্বচরিতা বিনয়কে বলিল, “আপনি একবার আমাদের ও দিকে যাবেন না ?” - স্বচরিতা বিনয়কে যাইতে বলিল, গোরাকে বলিতে পারিল না। গোরা তাহার ঠিক অর্থটা বুঝিল না, তাহার মনের মধ্যে একটা আঘাত বাজিল। বিনয় যে সহজেই সকলের মাঝখানে আপনার স্থান করিয়া লইতে পারে আর গোরা তাহা পারে না, এজন্ত গোরা ইতিপূর্বে কোনোদিন কিছুমাত্র খেদ অনুভব করে নাই— আজ নিজের প্রকৃতির এই অভাবকে অভাব বলিয়া বুঝিল । (? (? ললিতার সঙ্গে তাহার বিবাহ-প্রসঙ্গ আলোচনা করিবার জন্যই যে স্বচরিতা বিনয়কে ডাকিয় গেল, বিনয় তাহা বুঝিয়াছিল। এই প্রস্তাবটিকে সে শেষ করিয়া দিয়াছে বলিয়াই তো ব্যাপারটা শেষ হইয়া যায় নাই ; তাহার যতক্ষণ আয়ু আছে ততক্ষণ কোনো পক্ষের নিষ্কৃতি থাকিতে পারে না । এতদিন বিনয়ের সকলের চেয়ে বড়ো ভাবন ছিল, গোরাকে আঘাত দিব কী করিয়া । গোরা বলিতে শুধু যে গোরা মানুষটি তাহা নহে ; গোরা যে ভাব, যে বিশ্বাস, যে জীবনকে আশ্রয় করিয়া আছে সেটাও বটে । ইহারই সঙ্গে বরাবর নিজেকে মিলাইয়া চলাই বিনয়ের অভ্যাসের এবং আনন্দের বিষয় ছিল ; ইহার সঙ্গে কোনোপ্রকার বিরোধ যেন তাহার নিজেরই সঙ্গে বিরোধ । কিন্তু সেই আঘাতের প্রথম সংকোচটা কাটিয়া গেছে ; ললিতার প্রসঙ্গ লইয়া গোরার সঙ্গে একটা স্পষ্ট কথা হইয়া যাওয়াতে বিনয় জোর পাইল । ফোড় কাটাইবার পূর্বে রোগীর ভয় ও ভাবনার অবধি ছিল না ; কিন্তু অস্ত্র যখন পড়িল তখন রোগী দেখিল বেদনা আছে বটে, কিন্তু আরামও আছে, এবং জিনিসটাকে কল্পনায় যত সাংঘাতিক বলিয়া মনে হুইয়াছিল ততটাও নহে । এতক্ষণ বিনয় নিজের মনের সঙ্গে তর্কও করিতে পারিতেছিল না, এখন তাহার তর্কের দ্বারও খুলিয়া গেল। এখন মনে মনে গোরার সঙ্গে তাহার উত্তর প্রত্যুত্তর চলিতে লাগিল। গোরার দিক হইতে যে-সকল যুক্তিপ্রয়োগ সম্ভব সেইগুলি মনের মধ্যে উত্থাপিত করিয়া তাহাদিগকে নানা দিক হইতে খণ্ডন করিতে লাগিল। যদি