পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৬৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গোরা 86 X পরদিন সকালবেলায় চিঠিখানি লইয়া ব্রাহ্মসমাজে যাইবার সময় দেখিলেন সে চিঠি কে টুকরা টুকরা করিয়া ছিড়িয়া রাখিয়াছে । ¢ዓ অপরায়ে স্বচরিতা পরেশবাবুর কাছে বাইবে বলিয়া প্রস্তুত হইতেছিল এমন সময় বেহারা আসিয়া খবর দিল এক জন বাৰু আসিয়াছেন। “কে বাৰু? বিনয়বাৰু?” 蘭 বেহার কহিল, “না, খুব গৌরবর্ণ, লম্বা একটি বাৰু।” স্বচরিতা চমকিয়া উঠিয়া কছিল, “বাবুকে উপরের ঘরে এনে বসাও।” আজ সুচরিতা কী কাপড় পরিয়াছে ও কেমন করিয়া পরিয়াছে এতক্ষণ তাহা চিন্তাও করে নাই । এখন আয়নার সম্মুখে দাড়াইয়া কাপড়খানা কিছুতেই তাহার পছন্দ হইল না । তখন বদলাইবার সময় ছিল না । কম্পিত হস্তে কাপড়ের আঁচলে, চুলে, একটু-আধটু পারিপাট্য সাধন করিয়া স্পনিত হৃৎপিণ্ড লইয়া স্বচরিতা ঘরের মধ্যে প্রবেশ করিল। তাহার টেবিলের উপর গোরার রচনাবলী পড়িয়া ছিল সে কথা তাহার মনেই ছিল না। ঠিক সেই টেবিলের সম্মুখেই চেকিতে গোরা বসিয়া আছে। বইগুলি নিলজ্জভাবে ঠিক গোরার চোখের উপরে পড়িয়া আছে— সেগুলি ঢাকা দিবার বা সরাইবার কোনো উপায়মাত্র নাই ।

  • মালিমা আপনার সঙ্গে দেখা করবার জন্তে অনেক দিন থেকে ব্যস্ত হয়ে রয়েছেন, র্তাকে খবর দিই গে” বলিয়া স্বচরিতা ঘরে প্রবেশ করিয়াই চলিয়া গেল— সে একলা গোরার সঙ্গে আলাপ করিবার মতো জোর পাইল না ।

কিছুক্ষণ পরে স্বচরিত হরিমোহিনীকে সঙ্গে করিয়া লইয়া আসিল । কিছুকাল হইতে হরিমোহিনী বিনয়ের কাছ হইতে গোরার মত বিশ্বাস ও নিষ্ঠা এবং তাহার জীবনের কথা শুনিয়া আসিতেছেন । প্রায় মাঝে মাঝে তাহার অনুরোধে স্বচরিতা মধ্যাহ্নে তাহাকে গোরার লেখা পড়িয়া শুনাইয়াছে । যদিও সে-সব লেখা তিনি যে সমস্তই ঠিক বুঝিতে পারিতেন তাহা নহে এবং তাছাতে র্তাহার নিদ্রাকর্ষণেরই স্থবিধা করিয়া দিত তৰু এটুকু মোটামুটি বুঝিতে পারিতেন যে, শাস্ত্র ও লোকাচারের পক্ষ লইয়া গোরা এখনকার কালের আচারহীনতার বিরুদ্ধে লড়াই করিতেছে। আধুনিক ইংরেজি-শেখা ছেলের পক্ষে ইহা অপেক্ষ আশ্চর্য এবং ইহা অপেক্ষা গুণের কথা আর কী হইতে পারে! ব্রাহ্মপরিবারের মধ্যে প্রথম যখন বিনয়কে দেখিয়াছিলেন তখন বিনয়ই তাহাকে যথেষ্ট তৃপ্তিদান করিয়াছিল। কিন্তু ক্রমে সেটুকু অভ্যাস হুইয়া যাওয়ার