পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৬৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গোরা 8¢ዓ এড়াইয়া সে তাহার দিদির পাশ ঘেষিয়া দাড়াইল এবং আস্তে আস্তে বলিল, “পাল্লুবাৰু এসেছেন।” স্বচরিতা চমকিয়া উঠিল— তাহাকে কে যেন মারিল । পামুবাবুর আসাটাকে সে কোনোপ্রকারে ঠেলিয়া, সরাইয়া, চাপা দিয়া, একেবারে বিলুপ্ত করিয়া দিতে পারিলে বঁাচে এমনি তাহার অবস্থা হইল। সতীশের মুহু কণ্ঠস্বর গোরা শুনিতে পায় নাই মনে করিয়া স্বচরিতা তাড়াতাড়ি উঠিয়া পড়িল । সে একেবারে সিঁড়ি বাহিয়া নীচে নামিয়া হারানবাবুর সম্মুখে উপস্থিত হইয়াই কহিল, “আমাকে মাপ করবেন— আজ আপনার সঙ্গে কথাবর্তার স্ববিধা হবে না ।” হারানবাবু জিজ্ঞাসা করিলেন, "কেন স্থবিধা হবে না ?” স্বচরিতা এ প্রশ্নের উত্তর না দিয়া কহিল, “কাল সকালে আপনি যদি বাবার ওখানে আসেন তা হলে আমার সঙ্গে দেখা হবে ।” হারানবাবু কছিলেন, “আজ বুঝি তোমার ঘরে লোক আছে ?” এ প্রশ্নও এড়াইয়া সুচরিত কহিল, "আজ আমার অবসর হবে না, আজ আপনি দয়া করে মাপ করবেন।” হারানবাবু কহিলেন, "কিন্তু রাস্তা থেকে গৌরমোহনবাবুর গলার স্বর শুনলুম যে, তিনি আছেন বুঝি ?” এ প্রশ্নকে স্বচরিতা আর চাপা দিতে পারিল না, মুখ লাল করিয়া বলিল, “হা, আছেন।” 䲁 হারানবাবু কহিলেন, "ভালোই হয়েছে, তার সঙ্গেও আমার কথা ছিল । তোমার হাতে যদি বিশেষ কোনো কাজ থাকে তা হলে আমি ততক্ষণ গৌরমোহনবাবুর সঙ্গে আলাপ করব ।” বলিয়া হুচরিতার কাছ হইতে কোনো সম্মতির প্রতীক্ষা না করিয়া তিনি সিঁড়ি দিয়া উঠিতে লাগিলেন । স্বচরিতা পার্শ্ববর্তী হারানবাবুর প্রতি কোনো লক্ষ না করিয়া ঘরে প্রবেশ করিয়া গোরাকে কছিল, “মালি আপনার জন্তে খাবার তৈরি করতে গেছেন, আমি তাকে এক বার দেখে আসি ” এই বলিয়া লে দ্রুতপদে বাহির হইয়া গেল এবং হারানবাৰু গম্ভীর মুখে একটা চৌকি অধিকার করিয়া বসিলেন। হারানবাবু কছিলেন, “কিছু রোগ দেখছি যেন।" গোরা কছিল, "আজ্ঞা ই, কিছুদিন রোগ হবার চিকিৎসাই চলছিল।” হারানবাৰু কণ্ঠস্বর স্নিগ্ধ করিয়া কছিলেন, “তাই তো, আপনাকে খুব কষ্ট পেতে হয়েছে।” গোরা কহিল, "যে-রকম আশা করা যায় তার চেয়ে বেশি কিছুই নয়।”