পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৭২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8Nყo রবীন্দ্র-রচনাবলী স্বচরিতা চৌকি হইতে উঠিৱ কহিল, "গৌরমোহনবাবু, আপনার খাবার এতক্ষণে তৈরি হয়েছে। আপনি তা হলে ও ঘরে একবার চলুন। মালি আবার পাল্লুবাবুর কাছে বের হবেন না, তিনি হয়তে আপনার জন্তে অপেক্ষা করছেন ।” এই শেষ কথাটা স্বচরিতা হারানবাবুকে বিশেষ করিয়া আঘাত করিবার জন্তই বলিল । সে আজ অনেক সহিয়াছে, কিছু ফিরাইয়া না দিয়া থাকিতে পারিল না। গোরা উঠিল । অপরাজিত হারানবাবু কহিলেন, “আমি তবে অপেক্ষা করি।” সুচরিত কহিল, "কেন মিথ্যা অপেক্ষা করবেন, আজ আর সময় হয়ে উঠবে না ।” কিন্তু হারানবাবু উঠিলেন না । স্বচরিতা ও গোরা ঘর হইতে বাহির হইয়া গেল । গোরাকে এ বাড়িতে দেখিয়া ও তাহার প্রতি স্বচরিতার ব্যবহার লক্ষ্য করিয়া হারানবাবুর মন সশস্ত্র জাগিয়া উঠিল । ব্রাহ্মসমাজ হইতে স্বচরিতা কি এমন করিয়া স্থলিত হইয়া যাইবে ? তাহাকে রক্ষা করিবার কেহই নাই ? যেমন করিয়া হোক ইহার প্রতিরোধ করিতেই হইবে । হারানবাবু একখানা কাগজ টানিয়া লইয়া স্বচরিতাকে পত্র লিখিতে বসিলেন। হারানবাবুর কতকগুলি বাধা বিশ্বাস ছিল । তাহার মধ্যে এও একটি যে, সত্যের দোহাই দিয়া যখন তিনি ভৎসনা প্রয়োগ করেন তখন তাহার তেজস্বী বাক্য নিষ্ফল হইতে পারে না। শুধু বাক্যই একমাত্র জিনিল নহে, মামুষের মন বলিয়া একটা পদার্থ আছে সে কথা তিনি চিন্তাই করেন না । আহারাস্তে হরিমোহিনীর সঙ্গে অনেক ক্ষণ আলাপ করিয়া গোরা তাহার লাঠি লইবার জন্য যখন স্বচরিতার ঘরে আসিল তখন সন্ধ্যা হইয়া আসিয়াছে । স্বচরিতার ডেস্কের উপরে বাতি জলিতেছে । হারানবাবু চলিয়া গেছেন। স্বচরিতার নাম-লেখা একখানি চিঠি টেবিলের উপর শয়ান রহিয়াছে, সেখানি ঘরে প্রবেশ করিলেই চোখে পড়ে । সেই চিঠি দেখিয়াই গোরার বুকের ভিতরটা অত্যন্ত শক্ত হইয়া উঠিল। চিঠি যে হারানবাবুর লেখা তাহাতে সন্দেহ ছিল না। স্বচরিতার প্রতি হারানবাবুর যে একট। বিশেষ অধিকার আছে তাহা গোরা জানিত, সেই অধিকারের যে কোনো ব্যত্যয় ঘটিয়াছে তাহা সে জানিত না। আজ যখন সতীশ স্বচরিতার কানে কানে হারানবাবুর আগমনবার্তা জ্ঞাপন করিল এবং স্বচরিতা সচকিত হইয়া দ্রুতপদে নীচে চলিয়া গেল ও অল্পকাল পরেই নিজে তাহাকে সঙ্গে করিয়া উপরে লইয়া আসিল তখন গোরার মনে খুব একটা বেম্বর বাজিয়াছিল । তাহার পরে হারানবাবুকে যখন ঘরে একলা ফেলিয়া স্বচরিতা গোরাকে খাইতে লইয়া গেল তখন সে ব্যবহারটা কড়া ঠেকিয়াছিল