পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৮৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গোরা 8ፃፃ এমন কথা মনেও আনা উচিত নয়। শেষকালে ঠাকুরপুজো করে ললিতার বিয়ে হবে! এ কিছুতেই হতে দিতে পারব না !” গোরা না কি স্বচরিতার মন টানিয়া লইয়াছে, তাই সে আজ হিন্দুমতে বিবাহের কথায় এমন একটা অস্বাভাবিক আক্ষেপ প্রকাশ করিতেছে। এই আক্ষেপের ভিতরকার আসল কথাটা এই যে, পরেশকে স্বচরিতা এক জায়গায় দৃঢ় করিয়া ধরিয়া বলিতেছে— ‘তোমাকে ছাড়িব না, আমি এখনো তোমার সমাজের, তোমার মতের, তোমার শিক্ষার বন্ধন কোনোমতেই ছিড়িতে দিব না।’ পরেশ কহিলেন, “বিবাহ-অনুষ্ঠানে শালগ্রামের সংস্রব বাদ দিতে বিনয় রাজি হয়েছে ।” স্বচরিতা চৌকির পিছন হইতে আসিয়া পরেশের সম্মুখে চৌকি লইয়া বসিল । পরেশ তাহাকে জিজ্ঞাসা করিলেন, “এতে তুমি কী বল ?” স্বচরিত একটু চুপ করিয়া কহিল, "আমাদের সমাজ থেকে ললিতাকে তা হলে বেরিয়ে যেতে হবে ।” পরেশ কছিলেন, “এই কথা নিয়ে আমাকে অনেক চিস্তা করতে হয়েছে । কোনো মানুষের সঙ্গে সমাজের যখন বিরোধ বাধে তখন দুটো কথা ভেবে দেখবার আছে, দুই পক্ষের মধ্যে স্তার কোন দিকে এবং প্রবল কে । সমাজ প্রবল তাতে সন্দেহ নেই, অতএব বিদ্রোহীকে দুঃখ পেতে হবে । ললিতা বারম্বার আমাকে বলছে, দুঃখ স্বীকার করতে লে যে শুধু প্রস্তুত তা নয়, এতে সে আনন্দ বোধ করছে। এ কথা যদি সত্য হয় তা হলে অন্যায় না দেখলে আমি তাকে বাধা দেব কী করে ?” স্বচরিত কহিল, "কিন্তু, বাবা, এ কী-রকম হবে ।” পরেশ কছিলেন, “জানি এতে একটা সংকট উপস্থিত হবে । কিন্তু ললিতার সঙ্গে বিনয়ের বিবাহে যখন দোষ কিছু নেই, এমন-কি, লেটা উচিত, তখন সমাজে যদি বাধে তবে সে বাধা মানা কর্তব্য নয় ব’লে আমার মন বলছে । মানুষকেই সমাজের খাতিরে সংকুচিত হয়ে থাকতে হবে এ কথা কখনোই ঠিক নয়— সমাজকেই মানুষের খাতিরে নিজেকে কেবলই প্রশস্ত করে তুলতে হবে । সেজন্তে যারা দুঃখ স্বীকার করতে রাজি আছে আমি তো তাদের নিন্দা করতে পারব না।” স্নচরিতা কছিল, “বাবা, এতে তোমাকেই সব চেয়ে বেশি দুঃখ পেতে হবে ।” পরেশ কছিলেন, "সে কথা ভাববার কথাই নয়।” স্বচরিতা জিজ্ঞাসা করিল, “বাবা, তুমি কি সন্মতি দিয়েছ ?” পরেশ কছিলেন, “না, এখনো দিই নি । কিন্তু দিতেই হবে । ললিতা যে পথে