পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৯৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রবীন্দ্র-রচনাবলী وا م8b হয়েছে তখন কোনো সাজানো কথায় আর আমাকে কোনোদিন ভোলাতে পারবে না ।” গোরা কহিল, “পতঙ্গ যখন বহির মুখে পড়তে চলে লেও তখন তোমার মতো ঠিক ওই-রকম তর্কই করে, অতএব তোমাকে আমিও আজ বোঝাবার কোনো বৃথা চেষ্টা করব না ।” বিনয় চৌকি হইতে উঠিয়া কহিল, “সেই ভালো, তবে চললুম, একবার মার সঙ্গে দেখা করে আলি।” বিনয় চলিয়া গেল, মহিম ধীরে ধীরে ঘরে আসিয়া প্রবেশ করিলেন । পান চিবাইতে চিবাইতে জিজ্ঞাসা করিলেন, "সুবিধা হল না বুঝি ? হবেও না। কতদিন থেকে বলে আসছি, সাবধান হও, বিগড়াবার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে— কথাটা কানেই আনলে না । সেই সময়ে জোর-জার করে কোনোমতে শশিমুখীর সঙ্গে ওর বিয়েট দিয়ে দিতে পারলে কোনো কথাই থাকত না । কিন্তু কাকস্ত পরিবেদনা ! বলি বা কাকে ! নিজে যেটি বুঝবে না সে তো মাথা খুঁড়েও বুঝানো যাবে না। এখন, বিনয়ের মতো ছেলে তোমার দল ভেঙে গেল এ কি কম আপশোসের কথা !” গোরা কোনো উত্তর করিল না । মহিম কহিলেন, “তা হলে বিনয়কে ফেরাতে পারলে না ? তা যাক, কিন্তু শশিমুখীর সঙ্গে ওর বিবাহের কথাটা নিয়ে কিছু বেশি গোলমাল হয়ে গেছে । এখন শশীর বিয়ে দিতে আর দেরি করলে চলবে না— জানোই তো আমাদের সমাজের গতিক, যদি একটা মানুষকে কায়দায় পেলে তবে তাকে নাকের জলে চোখের জলে ক’রে ছাড়ে । তাই একটি পাত্ৰ— না, তোমার ভয় নেই, তোমাকে ঘটকালি করতে হবে না ; সে আমি নিজেই ঠিকঠাক করে নিয়েছি।” গোরা জিজ্ঞাসা করিল, “পাত্রটি কে ?” মহিম কহিলেন, “তোমাদের অবিনাশ ।” গোরা কহিলেন, “সে রাজি হয়েছে ?” মহিম কহিলেন, “রাজি হবে না ! এ কি তোমার বিনয় পেয়েছ ? না, যাই বলে দেখা গেল, তোমার দলের মধ্যে ওই অবিনাশ ছেলেটি তোমার ভক্ত বটে। তোমার পরিবারের সঙ্গে তার যোগ হবে এ কথা শুনে সে তো আহলাদে নেচে উঠল । বললে, এ আমার ভাগ্য, এ আমার গৌরব । টাকাকড়ির কথা জিজ্ঞাসা করলুম, সে অমনি কানে হাত দিয়ে বললে, মাপ করবেন, ও-সব কথা আমাকে কিছুই বলবেন না। আমি বললুম, আচ্ছ, সে-সব কথা তোমার বাবার সঙ্গে হবে । তার বাপের কাছেও