পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫০১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গোরা 8b*S তাহার বিরুদ্ধে গোরা কেবলই লড়াই করিতেছে । যাহারা মানে না তাহাদিগকে সে মানাইতে চায়, কিন্তু যে মানে তাহাকে সে কী বলিবে । বাহা লইয়া গোরার উত্তেজনা হরিমোহিনী তাহাতে সম্পূর্ণ উদাসীন। ব্রাহ্মসমাজের লোক যদি হিন্দুসমাজের সহিত না মিলিয়া নিজের মত লইয়া থাকে তাহাতে র্তাহার আস্তরিক ক্ষোভ কিছুই নাই, তাহার নিজের প্রিয়জনগুলির সহিত র্তাহার বিচ্ছেদের কোনো কারণ না ঘটলেই তিনি নিশ্চিস্ত থাকেন । এই জন্য গোরার সঙ্গে আলাপ করিয়া তাহার হৃদয় লেশমাত্র রস পায় নাই । ইহার পরে হরিমোহিনী যখনই অনুভব করিলেন গোরাই স্বচরিতার মনকে অধিকার করিয়াছে তখনই গোরার কথাবার্তা তাহার কাছে আরও বেশি অরুচিকর ঠেকিতে লাগিল। স্বচরিতা আর্থিক বিষয়ে সম্পূর্ণ স্বাধীন এবং মতে বিশ্বাসে আচরণে সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র, এইজন্ত স্বচরিতাকে কোনো দিক দিয়া হরিমোহিনী সর্বতোভাবে আয়ত্ত করিতে পারেন নাই, অথচ স্বচরিতাই শেষ বয়সে হরিমোহিনীর একটিমাত্র অবলম্বন— এই কারণেই স্বচরিতার প্রতি পরেশবাবুর ছাড়া আর কাহারও কোনোপ্রকার অধিকার হরিমোহিনীকে নিতাস্ত বিক্ষুব্ধ করিয়া তোলে । হরিমোহিনীর কেবলই মনে হইতে লাগিল গোরার আগাগোড়া সমস্তই কৃত্রিমতা, তাহার আসল মনের লক্ষ্য কোনোরকম ছলে স্বচরিতার চিত্ত আকর্ষণ করা । এমনকি, স্বচরিতার নিজের যে বিষয়সম্পত্তি আছে তাহার প্রতিও মূখ্যভাবে গোরার লুব্ধতা আছে বলিয়া হরিমোহিনী কল্পনা করিতে লাগিলেন । গোরাকেই হরিমোহিনী র্তাহার প্রধান শত্রু স্থির করিয়া তাহাকে বাধা দিবার জন্ত মনে মনে কোমর বাধিয়া দাড়াইলেন । স্বচরিতার বাড়িতে আজ গোরার ফাইবার কোনো কথা ছিল না, কোনো কারণও ছিল না। কিন্তু গোরার স্বভাবে দ্বিধা জিনিসটা অত্যস্ত কম। সে যখন কিছুতে প্রবৃত্ত হয় তখন সে সম্বন্ধে সে চিস্তাই করে না । একেবারে তীরের মতো লোজা চলিয়া যায় । আজ প্রাতঃকালে স্বচরিতার ঘরে গিয়া গোরা যখন উঠিল তখন হরিমোহিনী পূজার প্রবৃত্ত ছিলেন । স্বচরিতা তাহার বসিবার ঘরে টেবিলের উপরকার বই খাত কাগজ প্রভৃতি পরিপাটি করিয়া গুছাইয়া রাখিতেছিল, এমন সময় সতীশ আসিয়া যখন খবর দিল গৌরবাবু আসিয়াছেন তখন স্বচরিতা বিশেষ বিস্ময় অনুভব করিল না । লে যেন মনে করিয়াছিল, আজ গোরা আসিবে। গোর চেকিতে বসিয়া কছিল, “শেষকালে বিনয় আমাদের ত্যাগ করলে ?” স্বচরিতা কহিল, "কেন, ত্যাগ করবেন কেন, তিনি তো ব্রাহ্মসমাজে যোগ দেন नि ।”