পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫০৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

858 রবীন্দ্র-রচনাবলী ও যখন পরেশবাবুর বাড়িতে ছিল তখনই তো আমার সঙ্গে মিশে ও হিন্থ হয়ে গেছে রব উঠেছিল। তার পরে এ বাড়িতে এসে তোমাদের বিনয়ের সঙ্গে কী জানি কী সব কথাবার্তা হতে লাগল, আবার সব উলটে গেল । তিনি তো আজ ব্রাহ্মঘরে বিয়ে করতে যাচ্ছেন । যাক ! অনেক কষ্টে বিনয়কে তো বিদায় করেছি। তার পরে হারানবাবু ব’লে একটি লোক আসত ; সে এলেই আমি রাধারানীকে নিয়ে আমার উপরের ঘরে বসতুম, সে আর আমল পেল না। এমনি করে অনেক দুঃখে ওর আজকাল আবার যেন একটু মতি ফিরেছে বলে বোধ হচ্ছে । এ বাড়িতে এসে ও আবার সকলের ছোওয়া খেতে আরম্ভ করেছিল, কাল দেখলুম সেটা বন্ধ করেছে। কাল রান্নাঘর থেকে নিজের ভাত নিজেই নিয়ে গেল, বেহারাকে জল আনতে বারণ করে দিলে । এখন, বাপু, তোমার কাছে জোড়-হাতে আমার এই মিনতি, তোমরা ওকে আর মাটি কোরো না । সংসারে আমার যে-কেউ ছিল সব ম’রে ঝ'রে কেবল ওই একটিতে এসে ঠেকেছে, ওরও ঠিক আপন বলতে আমি ছাড়া আর কেউ নেই । ওকে তোমরা ছেড়ে দাও । ওদের ঘরে আরও তো ঢের বড়ো বড়ো মেয়ে আছে— ওই লাবণ্য আছে, লীলা আছে, তারাও বুদ্ধিমতী, পড়াশুনা করেছে ; যদি তোমার কিছু বলবার থাকে ওদের কাছে গিয়ে বলে গে, কেউ তোমাকে মানা করবে না ।” গোরা একেবারে স্তম্ভিত হইয়া বসিয়া রহিল। হরিমোহিনী কিছুক্ষণ চুপ করিয়া থাকিয়া পুনরায় কহিলেন, "ভেবে দেখো ওকে তো বিয়েথাওয়া করতে হবে, বয়স তো যথেষ্ট হয়েছে। তুমি কি বল ও চিরদিন এই রকম আইবুড়ো হয়েই থাকবে ? গৃহধর্ম করাটা তো মেয়েমানুষের দরকার ” সাধারণভাবে এ সম্বন্ধে গোরার কোনো সংশয় ছিল না— তাহারও এই মত বটে। কিন্তু স্বচরিতা সম্বন্ধে নিজের মতকে সে মনে মনেও কখনো প্রয়োগ করিয়া দেখে নাই। স্বচরিতা গৃহিণী হইয়া কোনো-এক গৃহস্থ-ঘরের অন্তঃপুরে ঘরকন্নায় নিযুক্ত আছে এ কল্পনা তাহার মনেও ওঠে না । যেন স্বচরিতা আজও যেমন আছে বরাবর ঠিক এমনিই থাকিবে । গোরা জিজ্ঞাসা করিল, “আপনার বোনঝির বিবাহের কথা কিছু ভেবেছেন নাকি ?” হরিমোহিনী কহিলেন, “ভাবতে হয় বইকি, আমি না হলে আর ভাববে কে ?” গোরা প্রশ্ন করিল, “হিন্দুসমাজে কি ওঁর বিবাহ হতে পারবে ?” হরিমোহিনী কহিলেন, “সে চেষ্টা তো করতে হবে । ও যদি আর গোল না