পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫০৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রবীন্দ্র-রচনাবলী טס88 হারানবাবু একেবারেই স্বচরিতার বাড়িতে ঢুকিয়া রান্নাঘরের মুক্তার দিয়া তাহাকে দেখিতে পাইলেন ; স্বচরিতার পালাইবার পথ ছিল না, মালিও নিকটে ছিলেন না । * * হারানবাবু জিজ্ঞাসা করিলেন, "গৌরমোহনবাবুর সঙ্গে এই মাত্র দেখা হল । তিনি এখানেই এতক্ষণ ছিলেন বুঝি ?” স্বচরিতা তাহার কোনো জবাব না করিয়া হঠাৎ হাড়িকুড়ি লইয়া অত্যন্ত ব্যস্ত হইয়া উঠিল, যেন এখন তাহার নিশ্বাস ফেলিবার অবকাশ নাই এইরকম ভাবটা জানাইল । কিন্তু হারানবাবু তাহাতে নিরস্ত হইলেন না। তিনি ঘরের বাহিরে সেই প্রাঙ্গণে দাড়াইয়া কথাবার্তা আরম্ভ করিয়া দিলেন । হরিমোহিনী সিড়ির কাছে অসিয়া দুই-তিন বার কাশিলেন, তাহাতেও কিছুমাত্র ফল হইল না। হরিমোহিনী হারানবাবুর সম্মুখেই আসিতে পারিতেন, কিন্তু তিনি নিশ্চয় বুঝিয়াছিলেন, একবার যদি তিনি হারানবাবুর সম্মুখে বাহির হন তবে এ বাড়িতে এই উদ্যমশীল যুবকের অদম্য উৎসাহ হইতে তিনি এবং স্বচরিতা কোথাও আত্মরক্ষা করিতে পারিবেন না । এই জন্ত হারানবাবুর ছায়া দেখিলেও তিনি এতট। পরিমাণে ঘোমটা টানিয়া দেন যে তাহ তাহার বধুবয়সেও তাহার পক্ষে অতিরিক্ত বলিয়া গণ্য হইতে পারিত। হারানবাবু কহিলেন, “স্বচরিতা, তোমরা কোন দিকে চলেছ বলে দেখি । কোথায় গিয়ে পৌছবে ? বোধ হয় শুনেছ ললিতার সঙ্গে বিনয়বাবুর হিন্দুমতে বিয়ে হবে ? তুমি জান এজন্যে কে দায়ী ?” স্বচরিতার নিকট কোনো উত্তর না পাইয়া হারানবাবু স্বর নত করিয়া গম্ভীরভাবে কহিলেন, "দায়ী তুমি ” হারানবাবু মনে করেছিলেন, এতবড়ো একটা সাংঘাতিক অভিযোগের আঘাত স্বচরিতা সহ করিতে পারিবে না। কিন্তু সে বিনা বাক্যব্যয়ে কাজ করিতে লাগিল দেখিয়া তিনি স্বর আরও গম্ভীর করিয়া স্বচরিতার প্রতি র্তাহার তর্জনী প্রসারিত ও কম্পিত করিয়া কহিলেন, “স্বচরিতা, আমি আবার বলছি, দায়ী তুমি। বুকের উপরে ডান হাত রেখে কি বলতে পার যে, এজন্যে ব্রাহ্মসমাজের কাছে তোমাকে অপরাধী হতে হবে না ?” স্বচরিতা উনানের উপরে নীরবে তেলের কড়া চাপাইয়া দিল এবং তেল চড় বড়, শব্দ করিতে লাগিল । হারান বলিতে লাগিলেন, “তুমিই বিনয়বাবুকে এবং গৌরমোহনবাবুকে তোমাদের ঘরে এনেছ এবং তাদের এতদূর পর্যন্ত প্রশ্রয় দিয়েছ যে, আজি তোমাদের ব্রাহ্মসমাজের