পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫১৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গোরা டி (to S গোরা কহিল, "না, সে কিছুতেই হবে না ।” মহিম কছিলেন, "শশীর বিবাহের প্রস্তাবটা ঘনিয়ে আসছে । আমাদের বেহাই যতটুকু পরিমাণ মেয়ে ঘরে নেবেন সোনা তার চেয়ে বেশি না নিয়ে ছাড়বেন না ; কারণ, তিনি জানেন মানুষ নশ্বর পদার্থ সোনা তার চেয়ে বেশি দিন টেকে। ওষুধের চেয়ে অনুপানটার দিকেই তার ক্টোক বেশি । বেহাই বললে তাকে খাটো করা হয়, একেবারে বেহায় । কিছু খরচ হবে বটে, কিন্তু লোকটার কাছে আমার অনেক শিক্ষা হল, ছেলের বিয়ের সময় কাজে লাগবে | ভারি লোভ হচ্ছিল আর-এক বার এ কালে জন্মগ্রহণ করে বাবাকে মাঝখানে বসিয়ে রেখে নিজের বিয়েট একবার বিধিমত পাকিয়ে তুলি— পুরুষজন্ম যে গ্রহণ করেছি সেটাকে একেবারে বোলো আনা সার্থক করে নিই । একেই তো বলে পৌরুষ । মেয়ের বাপকে একেবারে ধরাশায়ী করে দেওয়া । কম কথা ! যাই বল, তোমার সঙ্গে যোগ দিয়ে যে নিশিদিন হিন্দুসমাজের জয়ধ্বনি করব কিছুতেই তাতে জোর পাচ্ছি নে ভাই, গলা উঠতে চায় না, একেবারে কাহিল করে ফেলেছে । আমার তিনকড়েটার বয়স এখন সবে চৌদ্দ মাস— গোড়ায় কন্যা জন্ম দিয়ে শেষে তার ভ্রম সংশোধন করতে সহধর্মিণী দীর্ঘকাল সময় নিয়েছেন । যা হোক, ওরই বিবাহের সময়ট পর্যস্ত, গোরা, তোমরা সকলে মিলে হিন্দু সমাজটাকে তাজা রেখো— তার পর দেশের লোক মুসলমান হোক, খৃস্টান হোক, অামি কোনো কথা কব না ।” গোরা উঠিয়া দাড়াইতেই মহিম কহিলেন, “তাই আমি বলছিলুম, শশীর বিবাহের সভায় তোমাদের বিনয়কে নিমন্ত্রণ করা চলবে না । তখন যে এই কথা নিয়ে আবার একটা কাণ্ড বাধিয়ে তুলবে সে হবে না । মাকে তুমি এখন থেকে সাবধান করে রেখে দিয়ে৷ ” মাতার ঘরে আসিয়া গোর। দেখিল আনন্দময়ী মেজের উপর বসিয়া চশমা চোখে অঁাটিয়া একটা খাতা লইয়া কিসের ফর্দ করিতেছেন । গোরাকে দেখিয়া তিনি চশমা খুলিয়া খাত বন্ধ করিয়া কছিলেন, “বোস ।” গোরা বসিলে আনন্দময়ী কহিলেন, “তোর সঙ্গে আমার একটা পরামর্শ আছে । বিনয়ের বিয়ের খবর তো পেয়েছিল ?” গোরা চুপ করিয়া রহিল। আনন্দময়ী কছিলেন, “বিনয়ের কাকা রাগ করেছেন, র্তারা কেউ আসবেন না। আবার পরেশবাবুর বাড়িতেও এ বিয়ে হয় কি না সন্দেহ, বিনয়কেই সমস্ত বন্দোবস্ত করতে হবে। তাই আমি বলছিলুম, আমাদের বাড়ির উত্তর-ভাগটার একতলা তো ভাড়া দেওয়া হয়েছে— ওর দোতলার ভাড়াটেও উঠে