পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫২০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

(o obr রবীন্দ্র-রচনাবলী হয় না। কিন্তু তুমিও যখন বিনয়কে পরিত্যাগ করাই কর্তব্য মনে করছ তখন আমার উপরেই সমস্ত ভার পড়ল, এ কাজ আমাকেই একলা নির্বাহ করতে হবে ।” একলা বলিতে পরেশবাবু ষে কতখানি একলা গোরা তখন তাহা জানিত না । বরদাসুন্দরী তাহার বিরুদ্ধে দাড়াইয়াছিলেন, বাড়ির মেয়ের প্রসন্ন ছিল না, হরিমোহিনীর আপত্তি আশঙ্কা করিয়া পরেশ স্বচরিতাকে এই বিবাহের পরামর্শে আহবানমাত্রও করেন নাই— ও দিকে ব্রাহ্মসমাজের সকলেই তাহার প্রতি খড়গহস্ত হইয়া উঠিয়াছিল এবং বিনয়ের খুড়ার পক্ষ হইতে তিনি যে দুই-একখানি পত্র পাইয়াছিলেন তাহাতে র্তাহাকে কুটিল কুচক্ৰী ছেলে-ধরা বলিয়া গালি দেওয়া হইয়াছিল । 弘 পরেশ বাহির হইয়া যাইতেই অবিনাশ এবং গোরার দলের আরও দুই-এক জন ঘরের মধ্যে প্রবেশ করিয়া পরেশবাবুকে লক্ষ্য করিয়া হাস্ত্যপরিহাস করিবার উপক্রম করিল। গোরা বলিয়া উঠিল, “যিনি ভক্তির পাত্র তাকে ভক্তি করবার মতো ক্ষমতা যদি না থাকে, অস্তত র্তাকে উপহাস করবার ক্ষুদ্রতা থেকে, নিজেকে রক্ষা কোরো ।” গোরাকে আবার তাহার দলের লোকের মাঝখানে তাহার পূর্বাভ্যস্ত কাজের মধ্যে আসিয়া পড়িতে হইল। কিন্তু বিস্বাদ, সমস্তই বিস্ব দি ! এ কিছুষ্ট নয় ! ইহাকে কোনো কাজই বলা চলে না । ইহাতে কোথাও প্রাণ নাই । এমনি করিয়া কেবল লিখিয়া-পড়িয়া, কথা কহিয়া, দল বাধিয়া যে কোনে কাজ হইতেছে না, বরং বিস্তর অকাজ সঞ্চিত হইতেছে, এ কথা গোরার মনে ইতিপূর্বে কোনোদিন এমন করিয়া আঘাত করে নাই ; নূতনলন্ধ শক্তিদ্বারা বিস্ফারিত তাহার জীবন আপনাকে পূর্ণভাবে প্রবাহিত করিবার অত্যন্ত একটি সত্য পথ চাহিতেছে— এ সমস্ত কিছুক্ত তাছার ভালো লাগিতেছে না । এ দিকে প্রায়শ্চিত্তসভার আয়োজন চলিতেছে। এই আয়োজনে গোরা একটু বিশেষ উৎসাহ বোধ করিয়াছে । এই প্রায়শ্চিত্ত কেবল জেলখানার অশুচিতার প্রায়শ্চিত্ত নহে, এই প্রায়শ্চিত্তের দ্বারা সকল দিকেই সম্পূর্ণ নির্মল হইয়া আবার এক বার যেন নূতন দেহ লইয়া সে আপনার কর্মক্ষেত্রে নবজন্ম লাভ করিতে চায়। প্রায়শ্চিত্তের বিধান লওয়া হইয়াছে, দিনস্থিরও হইয়া গেছে, পূর্ব ও পশ্চিম বঙ্গে বিখ্যাত অধ্যাপক-পণ্ডিতদিগকে নিমন্ত্রণপত্র দিবার উদযোগ চলিতেছে। গোরার দলে ধনী যাহারা ছিল তাহারা টাকাও সংগ্ৰহ করিয়া তুলিয়াছে, দলের লোকে সকলেই মনে করিতেছে দেশে অনেক দিন পরে একটা কাজের মতো কাজ হইতেছে ।