পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫২১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গোরা (t eS অবিনাশ গোপনে আপন সম্প্রদায়ের সকলের সঙ্গে পরামর্শ করিয়াছে, সেইদিন সভায় সমস্ত পণ্ডিতদিগকে দিয়া গোরাকে ধান্তদূর্ব ফুলচন্দন প্রভৃতি বিবিধ উপচারে ‘হিন্দুধর্মপ্ৰদীপ’ উপাধি দেওয়া হইবে । এই সম্বন্ধে সংস্কৃত কয়েকটি শ্লোক লিখিয়া, তাহার নিম্নে সমস্ত ব্ৰাহ্মণপণ্ডিতের নামস্বাক্ষর করাইয়া, সোনার জলের কালীতে ছাপাইয়া, চন্দনকাষ্ঠের বাক্সের মধ্যে রাখিয়া তাহাকে উপহার দিতে হইবে । সেই সঙ্গে ম্যাক্সমূলরের দ্বারা প্রকাশিত একথও ঋগ্‌বেদগ্রন্থ বহুমূল্য মরক্কো চামড়ায় বাধাইয়া সকলের চেয়ে প্রাচীন ও মান্ত অধ্যাপকের হাত দিয়া তাহাকে ভারতবর্ষের আশীৰ্বাদীস্বরূপ দান করা হইবে— ইহাতে, আধুনিক ধর্মভ্ৰষ্টতার দিনে গোরাই যে সনাতন বেদবিহিত ধর্মের যথার্থ রক্ষাকর্তা এই ভাবটি অতি স্বন্দরব্রুপে প্রকাশিত হইবে । এইরূপে সেদিনকার কর্মপ্রণালীকে অত্যন্ত হৃদ্য এবং ফলপ্রদ করিয়া তুলিবার জন্য গোরার অগোচরে তাহার দলের লোকের মধ্যে প্রত্যহই মন্ত্রণা চলিতে লাগিল । W5& হরিমোহিনী তাহার দেবর কৈলাসের নিকট হইতে পত্র পাইয়াছেন । তিনি লিখিতেছেন, ‘শ্ৰীচরণশীর্বাদে অত্রস্থ মঙ্গল, আপনকার কুশলসমাচারে আমাদের চিস্তা দূর করিবেন। বলা বাহুল্য হরিমোহিনী তাছাদের বাড়ি পরিত্যাগ করার পর হইতেই এই চিস্তা তাহারা বহন করিয়া আসিতেছে, তথাপি কুশলসমাচারের অভাব দূর করিবার জন্ত তাহারা কোনোপ্রকার চেষ্টা করে নাই । খুদি পটল ভজহরি প্রভৃতি সকলের সংবাদ নিঃশেষ করিয়া উপসংহারে কৈলাস লিখিতেছে— ‘আপনি ষে পাত্ৰীটির কথা লিখিয়াছেন তাহার সমস্ত খবর ভালো করিয়া জানাইবেন । আপনি বলিয়াছেন, তাহার বয়স বারো-তেরো হইবে, কিন্তু বাড়ন্ত মেয়ে, দেখিতে কিছু ডাগর দেখায়, তাহাতে বিশেষ ক্ষতি হইবে না । তাহার যে সম্পত্তির কথা লিখিয়াছেন তাহাতে তাহার জীবনস্বত্ব অথবা চিরস্বত্ব তাহা ভালো করিয়া খোজ করিয়া লিখিলে অগ্রজমহাশয়দিগকে জানাইয়া তাহাদের মত লইব । বোধ করি, তাহাদের অমত না হইতে পারে। পাত্ৰীটির হিন্দুধর্মে নিষ্ঠা আছে শুনিয়া নিশ্চিস্ত হইলাম, কিন্তু এতদিন সে ব্রাহ্মঘরে মানুষ হইয়াছে এ কথা যাহাতে প্রকাশ না হইতে পারে লেজন্ত চেষ্টা করিতে হইবে— অতএব এ কথা আর কাহাকেও জানাইবেন না। আগামী পূর্ণিমায় চন্দ্রগ্রহণে গঙ্গাস্বানের ষোগ আছে,