পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫২৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

©ᎼᏬ রবীন্দ্র-রচনাবলী তাহা সে নিশ্চয় জানে, কিন্তু বাহিরের দুই-একটা বড়ো বড়ো স্বত্রে যে টান পড়িয়াছে ইহার বেদনাও তাহাকে বিশ্রাম দিতেছে না । এ দিকে হরিমোহিনী তাহার জীবনকে অহরহ অসহ্য করিয়া তুলিয়াছেন। এইজন্য স্বচরিতা আজ বরদাস্বন্দরীর অপ্রসন্নতাও স্বীকার করিয়া পরেশের বাড়িতে আসিয়া উপস্থিত হইল । অপরাহ্বশেষের স্বর্য তখন পাশ্ববতী পশ্চিম দিকের তেতালা বাড়ির আড়ালে পড়িয়া সুদীর্ঘ ছায়া বিস্তার করিয়াছে ; এবং সেই ছায়ায় পরেশ তখন শির নত করিয়া একলা তাহার বাগানের পথে ধীরে ধীরে পদচারণা করিতেছিলেন । স্বচরিত তাহার পাশে আসিয়া যোগ দিল। কহিল, “বাবা, তুমি কেমন আছ ?” পরেশবাবু হঠাৎ তাহার চিস্তায় বাধা পাইয়া ক্ষণকালের জন্য স্থির হইয়া দাড়াইয়া রাধারানীর মুখের দিকে চাহিলেন এবং কহিলেন, “ভালো আছি রাধে!” দুই জনে বেড়াইতে লাগিলেন। পরেশবাবু কহিলেন, "সোমবারে ললিতার বিবাহ ।” সুচরিতা ভাবিতেছিল, এই বিবাহে তাহাকে কোনো পরামর্শে বা সহায়তায় ডাকা হয় নাই কেন এ কথা সে জিজ্ঞাসা করিবে । কিন্তু কুষ্ঠিত হইয়া উঠিতেছিল, কেনন তাহার তরফেও এবার এক জায়গায় একটা কী বাধা আসিয়া পড়িয়াছিল । আগে হইলে সে তো ডাকিবার অপেক্ষ রাখিত না । স্বচরিতার মনে এই-ষে একটি চিস্তা চলিতেছিল পরেশ ঠিক সেই কথাটাই আপনি তুলিলেন ; কহিলেন, “তোমাকে এবার ডাকতে পারি নি রাধে!” স্বচরিতা জিজ্ঞাসা করিল, "কেন বাবা ?” স্বচরিতার এই প্রশ্নে পরেশ কোনো উত্তর না দিয়া তাহার মুখের দিকে নিরীক্ষণ করিয়া রছিলেন। স্বচরিতা আর থাকিতে পারিল না। সে মুখ একটু নত করিয়া কহিল, “তুমি ভাবছিলে, আমার মনের মধ্যে একটা পরিবর্তন ঘটেছে।” পরেশ কহিলেন, “হা, তাই ভাবছিলুম আমি তোমাকে কোনোরকম অনুরোধ করে সংকোচে ফেলব না ।” স্বচরিতা কহিল, "বাবা, আমি তোমাকে সব কথা বলব মনে করেছিলুম, কিন্তু তোমার যে দেখা পাই নি। সেইজন্যেই আজ আমি এসেছি। আমি যে তোমাকে বেশ ভালো করে আমার মনের ভাব বলতে পারব আমার লে ক্ষমতা নেই । আমার ভয় হয় পাছে ঠিকটি তোমার কাছে বলা না হয় ।” পরেশ কছিলেন, “আমি জানি এসব কথা স্পষ্ট করে বলা সহজ নয়। তুমি একটা জিনিস তোমার মনে কেবল ভাবের মধ্যে পেয়েছ, তাকে অনুভব করছ, কিন্তু তার আকারপ্রকার তোমার কাছে পরিচিত হয়ে ওঠে নি।”