পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫৩৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গোরা QSの ভাইবোনের কাজ আমরা দুজনে মিলে করব। কী বলিস সতীশ ? আমাদের দেশকে প্রাণ দিয়ে বড়ো করে তুলতে হবে । বড়ো করব কী ! আমাদের দেশের মতো বড়ো আর কী আছে! আমাদের প্রাণকেই বড়ো করে তুলতে হবে । জানিস ? বুঝতে পেরেছিল ?” 離 বুঝিতে পারিল না এ কথা সতীশ সহজে স্বীকার করিবার পাত্র নয় । সে জোরের সহিত বলিল, “স্থা।” স্বচরিতা কহিল, “আমাদের যে দেশ, আমাদের যে জাত, সে কতবড়ো তা জানিস ! সে অামি তোকে বোঝাব কেমন করে ! এ এক অশ্চির্য দেশ । এই দেশকে পৃথিবীর সকলের চূড়ার উপরে বসাবার জন্তে কত হাজার হাজার বংসর ধরে বিধাতার আয়োজন হয়েছে, দেশ বিদেশ থেকে কত লোক এসে এই আয়োজনে যোগ দিয়েছে, এ দেশে কত মহাপুরুষ জন্মেছেন, কত মহাযুদ্ধ ঘটেছে, কত মহাবাক্য এইখনি থেকে বলা হয়েছে, কত মহাতপস্যা এইখানে সাধন করা হয়েছে, ধর্মকে এ দেশ কত দিক থেকে দেখেছে এবং জীবনের সমস্তার কত-রকম মীমাংসা এক্ট দেশে হয়েছে! সেই আমাদের এই ভারতবর্ষ ! একে খুব মহৎ বলেই জানিস ভাই— একে কোনোদিন ভুলেও অবজ্ঞা করিস নে ! তোকে আজ আমি যা বলছি একদিন সে কথা তোকে বুঝতেই হবে— আজও তুই যে কিছু বুঝতে পারিস নি আমি তা মনে করি নে। এই কথাটি তোকে মনে রাখতে হবে, খুব একটা বড়ো দেশে তুই জন্মেছিল, সমস্ত হৃদয় দিয়ে এই বড়ো দেশকে ভক্তি করবি, আর সমস্ত জীবন দিয়ে এই বড়ো দেশের কাজ করবি ।” সতীশ একটুখানি চুপ করিয়া থাকিয়া কহিল, "দিদি, তুমি কী করবে ?” স্বচরিত কহিল, “আমিও এই কাজ করব । তুই আমাকে সাহায্য করবি তো ?” সতীশ তৎক্ষণাং বুক ফুলাইয়া কহিল, “ই করব।” স্বচরিতার হৃদয় পূর্ণ করিয়া যে কথা জমিয়া উঠিতেছিল তাহা বলিবার লোক বাড়িতে কেহই ছিল না। তাই আপনার এই ছোটো ভাইটিকে কাছে পাইয়া তাহার সমস্ত আবেগ উচ্ছসিত হইয়া উঠিল। সে যে ভাষায় যাহা বলিল তাহা বালকের কাছে বলিবার নহে, কিন্তু স্বচরিতা তাহাতে সংকুচিত হইল না । তাহার মনের এইরূপ উৎসাহিত অবস্থায় এই জ্ঞানটি সে পাইয়াছিল ষে, যাহা নিজে বুঝিয়াছি তাহাকে পূর্ণভাবে বলিলে তবেই ছেলেবুড়া সকলে আপন আপন শক্তি-অনুসারে তাহাকে এক-রকম বুঝিতে পারে, তাহাকে অন্তের বুদ্ধির উপযোগী করিয়া হাতে রাখিয়া বুঝাইতে গেলেই সত্য আপনি বিকৃত হইয়া যায়।