পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫৩৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Qミ8 রবীন্দ্র-রচনাবলী সতীশের কল্পনাবৃত্তি উত্তেজিত হইয়া উঠিল ; সে কহিল, "বড়ো হলে আমার যখন অনেক অনেক টাকা হবে তখন—“ স্বচরিতা কহিল, “না না না— টাকার কথা মুখে আনিস নে, আমাদের দুজনের টাকার দরকার নেই বক্তিয়ার ! আমরা যে কাজ করব তাতে ভক্তি চাই, প্রাণ চাই ।” এমন সময় ঘরের মধ্যে আনন্দময়ী আসিয়া প্রবেশ করিলেন। মুচরিতার বুকের ভিতরে রক্ত নৃত্য করিয়া উঠিল— সে আনন্দময়ীকে প্রণাম করিল। প্রণাম করা সতীশের ভালো আসে না, সে লজ্জিতভাবে কোনোমতে কাজটা সারিয়া লইল । আনন্দময়ী সতীশকে কোলের কাছে টানিয়া লইয়া তাহার শিরশ স্বন করিলেন, এবং স্বচরিতাকে কহিলেন, “তোমার সঙ্গে একটু পরামর্শ করতে এলুম মা, তুমি ছাড়া আর তো কাউকে দেখি নে । বিনয় বলছিল ‘বিয়ে আমার বাসাতেই হবে । আমি বললুম, সে কিছুতেই হবে না— ‘তুমি মস্ত নবাব হয়েছ কি না, আমাদের মেয়ে অমনি সেধে গিয়ে তোমার ঘরে এসে বিয়ে করে যাবে ! সে হবে না । আমি একটা বাসা ঠিক করেছি, সে তোমাদের এ বাড়ি থেকে বেশি দূর হবে না । আমি এইমাত্র সেখান থেকে আসছি। পরেশবাবুকে বলে তুমি রাজি করিয়ে নিয়ে ।” স্বচরিতা কহিল, “বাব রাজি হবেন ।” আনন্দময়ী কহিলেন, “তার পরে, তোমাকেও, মা, সেখানে যেতে হচ্ছে । এই তো সোমবারে বিয়ে । এই ক'দিন সেখানে থেকে আমাদের তো সমস্ত গুছিয়েগাছিয়ে নিতে হবে । সময় তো বেশি নেই । আমি একলাই সমস্ত করে নিতে পারি, কিন্তু তুমি এতে না থাকলে বিনয়ের ভারি কষ্ট হবে। সে মুখ ফুটে তোমাকে অনুরোধ করতে পারছে না— এমন-কি, আমার কাছেও সে তোমার নাম করে নি, তাতেই আমি বুঝতে পারছি ওখানে তার খুব একটা ব্যথা আছে । তুমি কিন্তু সরে থাকলে চলবে না মা ! ললিতাকেও সে বড়ে বীজবে ।” কুচরিতা একটু বিস্মিত হইয়া কছিল, "মা, তুমি এই বিয়েতে যোগ দিতে পারবে ?” আনন্দময়ী কহিলেন, “বল কী স্বচরিতা ! যোগ দেওয়া কী বলছ! আমি কি বাইরের লোক যে শুধু কেবল যোগ দেব ! এ যে বিনয়ের বিয়ে । এ তো আমাকেই সমস্ত করতে হবে। আমি কিন্তু বিনয়কে বলে রেখেছি, এ বিয়েতে আমি তোমার কেউ নয়, আমি কন্যাপক্ষে – আমার ঘরে সে ললিতাকে বিয়ে করতে আসছে।”