পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫৪১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গোরা 4*S কাপড় টানিয়া তাহার সম্মুখে আসিয়া তাহাকে নমস্কার করিলেন। পরেশ ব্যস্ত হইয় তাহাকে প্রতিনমস্কার করিলেন । আনন্দময়ী কহিলেন, “ললিতার জন্যে আপনি কোনো চিন্তা মনে রাখবেন না। আপনি যার হাতে ওকে সমর্পণ করছেন তার দ্বারা ও কখনো কোনো দুঃখ পাবে না— আর ভগবান এতকাল পরে আমার এই একটি অভাব দূর করে দিলেন, আমার মেয়ে ছিল না, আমি মেয়ে পেলুম । বিনয়ের বউটিকে নিয়ে আমার কন্যার দুঃখ ঘুচবে অনেক দিন ধরে এই আশাপথ চেয়ে বসে ছিলুম ; তা অনেক দেরিতে যেমন ঈশ্বর আমার কামনা পূরণ করে দিলেন, তেমনি এমন মেয়ে দিলেন আর এমন আশ্চর্য রকম করে দিলেন যে, আমি আমার এমন ভাগ্য কখনো মনে চিন্তাও করতে পারতুম না ।” ললিতার বিবাহের আন্দোলন আরম্ভ হওয়ার পর হইতে এই প্রথম পরেশবাবুর চিত্ত সংসারের মধ্যে এক জায়গায় একটা কূল দেখিতে পাইল এবং যথার্থ সাস্তুনা লাভ করিল । گرما কারাগার হইতে বাহির হওয়ার পর হইতে গোরার কাছে সমস্ত দিন এত লোকসমাগম হইতে লাগিল যে তাহীদের স্তবস্তুতি ও আলাপ-আলোচনার নিশ্বাসরোধকর অজস্র বাক্যরাশির মধ্যে বাড়িতে বাস করা তাহার পক্ষে অসাধ্য হইয়া উঠিল । গোরা তাই পুর্বের মতো পুনর্বার পল্লীশ্ৰমণ আরম্ভ করিল। সকালবেলায় কিছু খাইয়া বাড়ি হইতে বাহির হইত, একেবারে রাত্রে ফিরিয়া আসিত । ট্রেনে করিয়া কলিকাতার কাছাকাছি কোনো একটা স্টেশনে নামিয়া পল্লীগ্রামের মধ্যে গিয়া প্রবেশ করিত। সেখানে কলু কুমার কৈবর্ত প্রভৃতিদের পাড়ায় সে আতিথ্য লইত । এই গৌরবর্ণ প্রকাগুকায় ব্রাহ্মণটি কেন যে তাহীদের বাড়িতে এমন করিয়া ঘুরিতেছে, তাহাদের স্বখদু:খের খবর লইতেছে, তাহা তাহারা কিছুই বুঝিতে পারিত না ; এমন-কি, তাহাদের মনে নানাপ্রকার সন্দেহ জন্মিত । কিন্তু গোরা তাহাদের সমস্ত সংকোচ-সন্দেহ ঠেলিয়া তাহদের মধ্যে বিচরণ করিতে লাগিল। মাঝে মাঝে সে অপ্রিয় কথাও শুনিয়াছে, তাহাতেও নিরস্ত হয় নাই । যতই ইহাদের ভিতরে প্রবেশ করিল ততই একটা কথা কেবলই তাহার মনের মধ্যে ঘুরিয়া বেড়াইতে লাগিল। সে দেখিল, এই-সকল পল্লীতে সমাজের বন্ধন শিক্ষিত ভদ্রসমাজের চেয়ে অনেক বেশি । প্রত্যেক ঘরের খাওয়াদাওয়া শোওয়াবসা