পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫৪৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Qや8 রবীন্দ্র-রচনাবলী চিস্তা করিয়া, পায়ের উপর পা নাড়িতে নাড়িতে মনে মনে কহিল ‘কিছু না হোক দশ-পনেরো হাজার টাকা তো হবেই’ । মুখে একটু কম করিয়া বলিল, "কী বল বউঠাকরুন, সাত-আট হাজার টাকা হতে পারে।” হরিমোহিনী কৈলাসের গ্রাম্যতায় বিস্ময় প্রকাশ করিয়া কহিলেন, “বল কী ঠাকুরপো, সাত-আট হাজার টাকা কী ! বিশ হাজার টাকার এক পয়সা কম হবে না ।” কৈলাস অত্যন্ত মনোযোগের সহিত চারি দিকের জিনিসপত্র নীরবে নিরীক্ষণ করিতে লাগিল । এখনই সম্মতিস্থচক একটা মাথা নাড়িলেই এই শালকাঠের কড়িবরগা ও সেগুনকাঠের জানলা-দরজা-সমেত পাকা ইমারতটির একেশ্বর প্রভু সে হইতে পারে এই কথা চিন্তা করিয়া সে খুব একটা পরিতৃপ্তি বোধ করিল। জিজ্ঞাসা করিল, “সব তো হল, কিন্তু মেয়েটি ?” _ হরিমোহিনী তাড়াতাড়ি কহিলেন, “তার পিসির বাড়িতে হঠাৎ তার নিমন্ত্রণ হয়েছে, তাই গেছে— দু-চার দিন দেরি হতে পারে।” কৈলাস কহিল, “তা হলে দেখার কী হবে ? আমার ষে আবার একটা মকদ্দমা আছে, কালই যেতে হবে ।” হরিমোহিনী কহিলেন, “মকদ্দমা তোমার এখন থাক। এখানকার কাজ সারা না হলে তুমি যেতে পারছ না।” কৈলাস কিছুক্ষণ চিন্তা করিয়া শেষকালে স্থির করিল, নাহয় মকদ্দমাট এক তরফ ডিগ্রি হয়ে ফেলে যাবে। তা স্বাক্গে । এখানে যে তাহার ক্ষতিপূরণের আয়োজন আছে তাহা অার একবার চারি দিক নিরীক্ষণ করিয়া বিচার করিয়া লইল । হঠাৎ চোখে পড়িল, হরিমোহিনীর পূজার ঘরের কোণে কিছু জল জমিয়া আছে। এ ঘরে জল-নিকাশের কোনো প্রণালী ছিল না ; অথচ হরিমোহিনী সর্বদাই জল দিয়া এ ঘর ধোওয়ামোছা করেন ; সেইজন্য কিছু জল একটা কোণে বাধিয়াই থাকে । কৈলাস ব্যস্ত হইয়া কহিল, “বউঠাকরুন, ওটা তো ভালো হচ্ছে না।” হরিমোহিনী কহিলেন, “কেন, কী হয়েছে ?” কৈলাস কহিল, “ওই-যে ওখানে জল বসছে, ও তো কোনোমতে চলবে না।” হরিমোহিনী কহিলেন, “কী করব ঠাকুরপো!” কৈলাস কহিল, “না না, সে হচ্ছে না । ছাত যে একেবারে জপম হয়ে যাবে। তা বলছি, বউঠাকরুন, এ ঘরে তোমার জল-ঢালাঢালি চলবে না।” হরিমোহিনীকে চুপ করিয়া যাইতে হইল। কৈলাস তখন কস্তাটির রূপ সম্বন্ধে কৌতুহল প্রকাশ করিল।