পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫৪৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গোর 2やX2 হরিমোহিনী কছিলেন, “লে তো দেখলেই টের পাৰে, এপর্যন্ত বলতে পারি তোমাদের ঘরে এমন বউ কখনো হয় নি।” -- কৈলাস কহিল, "বল কী ! আমাদের মেজবউ—” হরিমোহিনী বলিয়া উঠিলেন, “কিলে আর কিসে তোমাদের মেজবউ তার কাছে দাড়াতে পারে !” মেজবউকেই তাহাদের বাড়ির স্বরূপের আদর্শ বলতে হরিমোহিনী বিশেষ সন্তোষ বোধ করেন নাই— “তোমরা যে যাই বল বাপু, মেজবউয়ের চেয়ে আমার কিন্তু ন’বউকে ঢের বেশি পছন্দ হয় ।” মেজবউ ও নবউয়ের সৌন্দর্যের তুলনায় কৈলাস কিছুমাত্র উৎসাহ বোধ করিল না। লে মনে মনে কোনো একটি অদৃষ্টপূর্ব মূর্তিতে পটল-চেরা চোখের সঙ্গে বশির মতো নাসিক যোজনা করিয়া আগুলফবিলম্বিত কেশরাশির মধ্যে নিজের কল্পনাকে দিগৃস্রাস্ত করিয়া তুলিতেছিল । হরিমোহিনী দেখিলেন, এ পক্ষের অবস্থাটি সম্পূর্ণ আশাজনক । এমন-কি, তাহার বোধ হইল কন্যাপক্ষে যে-সকল গুরুতর সামাজিক ক্রটি আছে তাহাও দুস্তর বিল্প বলিয়া গণ্য ন হইতে পfরে। ఆS গোর। আজকাল সকালেই বাড়ি হইতে বাহির হইয়া যায়, বিনয় তাহা জানিত, এইজন্য অন্ধকার থাকিতেই সোমবার-দিন প্রত্যুষে সে তাহার বাড়িতে গিয়া উপস্থিত হইল ; একেবারে উপরে উঠিয়া তাহার শয়নগৃহে গেল । সেখানে গোরাকে দেখিতে না পাইরা চাকরের কাছে সন্ধান লইয়া জানিল, সে ঠাকুরঘরে আছে। ইহাতে সে মনে মনে কিছু আশ্চর্য হইল। ঠাকুরঘরের দ্বারের কাছে আসিয়া দেখিল, গোরা পূজার ভাবে বলিয়া আছে ; একটি গরদের ধুতি পরা, গায়ে একটি গরদের চাদর, কিন্তু তাহার বিপুল শুভ্রদেহের অধিকাংশই অনাবৃত। বিনয় গোরাকে পূজা করিতে দেখিয়া আরও আশ্চর্য হইয়া গেল । জুতার শব্দ পাইয়া গোরা পিছন ফিরিয়া দেখিল ; বিনয়কে দেখিয়া গোরা উঠিয়া পড়িল এবং ব্যস্ত হইয়া কছিল, “এ ঘরে এলো না ।” বিনয় কছিল, “ভয় নেই, আমি যাব না । তোমার কাছেই আমি এসেছিলুম।” গোরা তখন বাহির হইয়া কাপড় ছাড়িয়া তেতলার ঘরে বিনয়কে লইয়া বসিল । বিনয় কছিল, “ভাই গোরা, আজ সোমবার।” 《제3