পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫৪৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

QCWり রবীন্দ্র-রচনাবলী গোরা কহিল, "নিশ্চয়ই সোমবার— পাজির ভুল হতেও পারে, কিন্তু আজকের দিন সম্বন্ধে তোমার ভুল হবে না। অন্তত আজ মঙ্গলবার নয়, সেটা ঠিক।” বিনয় কহিল, “তুমি হয়তো যাবে না, জানি— কিন্তু আজকের দিনে তোমাকে একবার না বলে এ কাজে আমি প্রবৃত্ত হতে পারব না । তাই আজ ভোরে উঠেই প্রথম তোমার কাছে এসেছি।” গোরা কোনো কথা না বলিয়া স্থির হইয়া বসিয়া রছিল। বিনয় কহিল, “তা হলে আমার বিবাহের সভায় যেতে পারবে না এ কথা নিশ্চয় স্থির ?” গোরা কহিল, “না বিনয়, আমি যেতে পারব না ।” বিনয় চুপ করিয়া রহিল। গোর হৃদয়ের বেদনা সম্পূর্ণ গোপন করিয়া হাসিয়া কহিল, “আমি নাইবা গেলুম, তাতে কী ? তোমারই তো জিত হয়েছে। তুমি তো মাকে টেনে নিয়ে গেছ। এত চেষ্টা করলুম, তাকে তো কিছুতে ধরে রাখতে পারলুম না । শেষে আমার মাকে নিয়েও তোমার কাছে আমার হার মানতে হল । বিনয়, একে একে ‘সব লাল হে জায়গা’ নাকি ! আমার মানচিত্রটাতে কেবল আমিই একলা এসে ঠেকব !” বিনয় কহিল, “ভাই, আমাকে দোষ দিয়ে না কিন্তু। আমি তাকে খুব জোর করেই বলেছিলুম, 'মা, আমার বিয়েতে তুমি কিছুতেই যেতে পাবে না।’ মা বললেন, দেখ বিমু, তোর বিয়েতে যারা যাবে না তারা তোর নিমন্ত্রণ পেলেও যাবে না, আর যারা যাবে তাদের তুই মানা করলেও যাবে— সেইজন্তেই তোকে বলি, তুই কাউকে নিমন্ত্রণও করিল নে, মানাও করিল নে, চুপ করে থাক ? গোরা, তুমি কি আমার কাছে হার মেনেছ ? তোমার মার কাছে তোমার হার— সহস্রবার হার । অমন মা কি জার আছে ” গোরা যদিচ আনন্দময়ীকে বদ্ধ করিবার জন্ত সম্পূর্ণ চেষ্টা করিয়াছিল, তথাপি তিনি যে তাহার কোনো বাধা না মানিয়া, তাহার ক্রোধ ও কষ্টকে গণ্য না করিয়া, বিনয়ের বিবাহে চলিয়া গেলেন, ইহাতে গোর তাহার অন্তরতর হৃদয়ের মধ্যে বেদন বোধ করে নাই, বরঞ্চ একটা আনন্দ লাভ করিয়াছিল । বিনয় তাহার মাতার অপরিমেয় স্নেহের যে অংশ পাইয়াছিল, গোরার সহিত বিনয়ের যতবড়ো বিচ্ছেদই হউক, সেই গভীর স্নেহস্থধার অংশ হইতে তাহাকে কিছুতেই বঞ্চিত করিতে পরিবে না ইহা নিশ্চয় জানিয়া গোরার মনের ভিতরে একটা যেন তৃপ্তি ও শাস্তি জন্মিল। আর-সব দিকেই বিনয়ের কাছ হইতে সে বহু দূরে বাইতে পারে, কিন্তু এই অক্ষয়