পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫৫২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রবীন্দ্র-রচনাবলী ميتاكياج) কাঠি— ইহার স্পর্শকে উপেক্ষা করিয়া অসাড় হইয়া কে পড়িয়া থাকিতে পারে! ইহাতে সামান্ত লোককেও ষে অসামান্ত করিয়া তোলে। সেই প্রবল অসামান্ততার স্বাদ মানুষ জীবনে যদি একবারও পায় তবে জীবনের সত্য পরিচয় সে লাভ করে । বিনয় কহিল, “গোরা, আমি তোমাকে নিশ্চয় বলিতেছি মামুষের সমস্ত প্রকৃতিকে এক মুহূর্তে জাগ্রত করিবার উপায় এই প্রেম— যে কারণেই হউক, আমাদের মধ্যে এই প্রেমের আবির্ভাব দুর্বল— সেইজন্যই আমরা প্রত্যেকেই আমাদের সম্পূর্ণ উপলব্ধি হইতে বঞ্চিত – আমাদের কী আছে তাহা আমরা জানি না, যাহা গোপনে আছে তাহাকে প্রকাশ করিতে পারিতেছি না, যাহা সঞ্চিত আছে তাহাকে ব্যয় করা আমাদের অসাধ্য। সেইজন্যই চারি দিকে এমন নিরানন্দ, এমন নিরানন্দ ! সেইজন্যই আমাদের নিজের মধ্যে যে কোনো মাহাত্ম্য আছে তাহা কেবল তোমাদের মতো দুইএক জনেই বোঝে, সাধারণের চিত্তে তাহার কোনো চেতনা নাই । মহিম সশব্দে হাই তুলিয়া বিছানা হইতে উঠিয়া যখন মুখ ধুইতে গেলেন তাহার পদশব্দে বিনয়ের উৎসাহ প্ৰবাহ বন্ধ হইয়া গেল, সে গোরার কাছে বিদায় লইয়া চলিয়। গেল । গোরা ছাতের উপর দাড়াইয়া পূর্বদিকের রক্তিম আকাশে চাহিয়া একটি দীর্ঘনিশ্বাস ফেলিল । অনেক ক্ষণ ধরিয়া ছাতে বেড়াইল, আজ তাহার আর গ্রামে যাওয়া হইল না । 碑 আজকাল গোরা নিজের হৃদয়ের মধ্যে যে-একটি আকাঙ্ক্ষা, যে-একটি পূর্ণতার অভাব অনুভব করিতেছে, কোনোমতেই কোনো কাজ দিয়াই তাহা সে পূরণ করিতে পারিতেছে না। শুধু সে নিজে নহে, তাহার সমস্ত কাজও যেন উর্ধ্বের দিকে হাত বাড়াইয়া বলিতেছে— একটা আলো চাই, উজ্জল আলো, সুন্দর আলো ! যেন আর সমস্ত উপকরণ প্রস্তুত আছে, যেন হীরামানিক সোনারুপা দুৰ্বমূল্য নয়, যেন লৌহ বঞ্জ বর্ম চর্ম দুর্লভ নয়— কেবল আশা ও সাত্ত্বনায় উদ্ভাসিত স্নিগ্ধস্বৰ্দর অরুণরাগমণ্ডিত আলো কোথায়? যাহা আছে তাহাকে আরও বাড়াইয়া তুলিবার জন্য কোনো প্রয়াসের প্রয়োজন নাই, কিন্তু তাহাকে সমুজ্জল করিয়া, লাবণ্যময় করিয়া, প্রকাশিত করিয়া তুলিবার যে অপেক্ষা আছে। * বিনয় যখন বলিল 'কোনো কোনো মাহেন্দ্রক্ষণে নরনারীর প্রেমকে আশ্রয় করিয়া একটি অনির্বচনীয় অসামান্তত উদভাসিত হইয়া উঠে তখন গোরা পূর্বের স্তায় সে কথাকে হাসিয়া উড়াইয়া দিতে পারিল না। গোরা মনে মনে স্বীকার করিল তাহা