পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫৫৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

(?&o রবীন্দ্র-রচনাবলী তিনি ললিতাদিদির বিবাহের আয়োজনে কয় দিন হইতে অন্তত্র ব্যাপৃত রছিয়াছেন। ক্ষণকালের জন্ত গোরা মনে করিল সে বিনয়ের বিবাহসভাতেই যাইবে । এমন সময় বাড়ির ভিতর হইতে একটি অপরিচিত বাৰু বাহির হইয়া কহিল, "কী মহাশয়, কী চান ?” গোরা তাহাকে আপাদমস্তক নিরীক্ষণ করিয়া কহিল, "না, কিছু চাই নে ৷” কৈলাস কহিল, "আমুন না একটু বসবেন, একটু তামাক ইচ্ছা করুন।” সঙ্গীর অভাবে কৈলাসের প্রাণ বাহির হইয়া যাইতেছে । যে হোক এক জন কাহাকেও ঘরের মধ্যে টানিয়া লইয়া গল্প জমাইতে পারিলে সে বঁাচে । দিনের বেলায় হুক হাতে গলির মোড়ের কাছে দাড়াইয়া রাস্তায় লোকচলাচল দেখিয় তাহার সময় এক-রকম কাটিয়া যায়, কিন্তু সন্ধ্যার সময় ঘরের মধ্যে তাহার প্রাণ স্থাপাইয়া উঠে । হরিমোহিনীর সঙ্গে তাহার যাহা-কিছু আলোচনা করিবার ছিল তাহা সম্পূর্ণ নিঃশেষ হইয়া গেছে । হরিমোহিনীর আলাপ করিবার শক্তিও অত্যস্ত সংকীর্ণ। এইজন্ত কৈলাস নীচের তলায় বাহির-দরজার পাশে একটি ছোটে ঘরে তক্তপোশে হু কণ লইয়া বসিয়া মাঝে মাঝে বেহারাটাকে ডাকিয়া তাহার সঙ্গে গল্প করিয়া সময় যাপন করিতেছে । গোরা কহিল, "না, আমি এখন বসতে পারছি নে ৷” কৈলাসের পুনশ্চ অনুরোধের স্বত্রপাতেই চোখের পলক না ফেলিতেই সে একেবারে গলি পার হইয়া গেল । গোরার একটি সংস্কার তাহার মনের মধ্যে দৃঢ় হইয়া ছিল যে, তাহার জীবনের অধিকাংশ ঘটনাই আকস্মিক নহে অথবা কেবলমাত্র তাহার নিজের ব্যক্তিগত ইচ্ছার দ্বারা সাধিত হয় না । সে তাহার স্বদেশবিধাতার একটি কোনো অভিপ্রায় সিদ্ধ করিবার জন্তই জন্মগ্রহণ করিয়াছে। এইজন্ত গোরা নিজের জীবনের ছোটো ছোটো ঘটনারও একটা বিশেষ অর্থ বুঝিতে চেষ্টা করিত। আজ যখন সে আপনার মনের এতবড়ো একটা প্রবল আকাঙ্ক্ষাবেগের মুখে হঠাৎ আসিয়া স্বচরিতার দরজা বন্ধ দেখিল এবং দরজা খুলিয়া যখন শুনিল স্বচরিতা নাই, তখন সে ইহাকে একটি অভিপ্রায়পূর্ণ ঘটনা বলিয়াই গ্রহণ করিল। তাহাকে যিনি চালনা করিতেছেন তিনি গোরাকে আজ এমনি করিয়া নিষেধ জানাইলেন । এ জীবনে স্বচরিতার দ্বার তাহার পক্ষে রুদ্ধ, স্বচরিতা তাহার পক্ষে নাই। গোরার মতো মানুষকে নিজের ইচ্ছা লইয়া মুখ হইলে চলিবে না, তাহার