পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫৫৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

¢8९ রবীন্দ্র-রচনাবলী স্বচরিতা কছিল, “মা, তবে এ ক'দিন আমিও তোমার সঙ্গে থাকব ।” ললিতাও উৎসাহিত হইয়া কছিল, “ই মা, স্থচিদিদিও আমাদের সঙ্গে কিছুদিন থাক্‌ ৷” সতীশ এই পরামর্শ শুনিতে পাইয়া ছুটিয়া আসিয়া স্বচরিতার গলা ধরিয়া লাফাইতে লাফাইতে কহিল, "হা দিদি, আমিও তোমাদের সঙ্গে থাকব ।” স্বচরিতা কহিল, “তোর যে পড়া আছে বক্তিয়ার ” সতীশ কহিল, “বিনয়বাৰু আমাকে পড়াবেন।” স্বচরিত কহিল, “বিনয়বাবু এখন তোর মাস্টারি করতে পারবেন না ।” বিনয় পাশের ঘর হইতে বলিয়া উঠিল, “খুব পারব। এক দিনে এমনি কি অশক্ত হয়ে পড়েছি তা তো বুঝতে পারছি নে। অনেক রাত জেগে লেখাপড়া যেটুকু শিখেছিলুম তাও যে এক রাত্রে সমস্ত ভুলে বসে আছি এমন তো বোধ হয় না।” আনন্দময়ী সুচরিতাকে কহিলেন, “তোমার মাসি কি রাজি হবেন ?” সুচরিতা কহিল, “আমি তাকে একটা চিঠি লিখছি।” আনন্দময়ী কহিলেন, “তুমি লিখো না। আমিই লিখব।” আনন্দময়ী জানিতেন স্বচরিতা যদি থাকিতে ইচ্ছা করে তবে হরিমোহিনীর তাহাতে অভিমান হইবে । কিন্তু তিনি অনুরোধ জানাইলে রাগ যদি করেন তবে তাহার উপরেই করিবেন, তাহাতে ক্ষতি নাই । আনন্দময়ী পত্রে জানাইলেন, ললিতার নূতন ঘরকন্না ঠিকঠাক করিয়া দিবার জন্য কিছুকাল তাহাকে বিনয়ের বাড়িতে থাকিতে হইবে স্বচরিতাও যদি এ কয়দিন র্তাহার সঙ্গে থাকিতে অনুমতি পায় তবে তাহার বিশেষ সহায়তা হয় । আনন্দময়ীর পত্রে হরিমোহিনী কেবল যে ক্রুদ্ধ হইলেন তাহা নহে, তাহার মনে বিশেষ একটা সন্দেহ উপস্থিত হইল । তিনি ভাবিলেন, ছেলেকে তিনি বাড়ি আসিতে বাধা দিয়াছেন, এবার স্বচরিতাকে ফাদে ফেলিবার জন্য মা কৌশলজাল বিস্তার করিতেছে। তিনি স্পষ্টই দেখিতে পাইলেন ইহাতে মাতাপুত্রের পরামর্শ আছে। আনন্দময়ীর ভাবগতিক দেখিয়া গোড়াতেই যে র্তাহার ভালো লাগে নাই সে কথাও তিনি স্মরণ করিলেন । আর কিছুমাত্র বিলম্ব না করিয়া যত শীঘ্র সম্ভব সুচরিতাকে একবার বিখ্যাত রায়গোষ্ঠীর অন্তর্গত করিয়া নিরাপদ করিয়া তুলিতে পারিলে তিনি বাচেন । কৈলাসকেই বা এমন করিয়া কতদিন বসাইয়া রাখা যায় ! সে বেচারা যে অহোরাত্র তামাক টানিয়া টানিয়া বাড়ির দেয়ালগুলা কালী করিবার জো করিল।