পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫৬৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

&@*e রবীন্দ্র-রচনাবলী १२ গঙ্গার ধারে বাগানে প্রায়শ্চিত্তসভার আয়োজন হইতে লাগিল । অবিনাশের মনে একটা আক্ষেপ বোধ হইতেছিল যে, কলিকাতার বাহিরে অনুষ্ঠানটা ঘটতেছে, ইহাতে লোকের চক্ষু তেমন করিয়া আকৃষ্ট হইবে না। অবিনাশ জানিত, গোরার নিজের জন্য প্রায়শ্চিত্তের কোনো প্রয়োজন নাই, প্রয়োজন দেশের লোকের জন্ত । মরাল এফেক্ট্‌ ! এইজন্ত ভিড়ের মধ্যেই এ কাজ দরকার । কিন্তু গোরা রাজি হইল না । সে ধেরূপ বৃহৎ হোম করিয়া, বেদমন্ত্র পড়িয়া এ কাজ করিতে চায়, কলিকাতা শহরের মধ্যে তেমনটা মানায় না । ইহার জন্য তপোবনের প্রয়োজন। স্বাধ্যায়মুখরিত হোমাগ্নিীপ্ত নিভৃত গঙ্গাতীরে, যে প্রাচীন ভারতবর্ষ জগতের গুরু তাহাকেই গোরা আবাহন করিবে এবং স্নান করিয়া পবিত্র হইয়া তাহার নিকট হইতে সে নবজীবনের দীক্ষা গ্রহণ করিবে । গোরা মরাল এফেক্টের জন্য ব্যস্ত নহে । অবিনাশ তখন অনন্যগতি হইয়া খবরের কাগজের আশ্রয় গ্রহণ করিল । সে গোরাকে না জানাইয়াই এই প্রায়শ্চিত্তের সংবাদ সমস্ত খবরের কাগজে রটনা করিয়া দিল । শুধু তাই নহে, সম্পাদকীয় কোঠায় সে বড়ো বড়ো প্রবন্ধ লিখিয়া দিল— তাহাতে সে এই কথাই বিশেষ করিয়া জানাইল যে, গোরার মতো তেজস্বী পবিত্র ব্রাহ্মণকে কোনো দোষ স্পর্শ করিতে পারে না, তথাপি গোরা বর্তমান পতিত ভারতবর্ষের সমস্ত পাতক নিজের স্বন্ধে লইয়া সমস্ত দেশের হইয়া প্রায়শ্চিত্ত করিতেছে। সে লিখিল— আমাদের দেশ যেমন নিজের দুষ্কৃতির ফলে বিদেশীর বন্দীশালায় আজ দুঃখ পাইতেছে, গোরাও তেমনি নিজের জীবনে সেই বন্দীশালায় বাসদুঃখ স্বীকার করিয়া লইয়াছে। এইরূপে দেশের দুঃখ সে যেমন নিজে বহন করিয়াছে এমনি করিয়া দেশের অনাচারের প্রায়শ্চিত্তও সে নিজে অনুষ্ঠান করিতে প্রস্তুত হইয়াছে, অতএব ভাই বাঙালি, ভাই ভারতের পঞ্চবিংশতিকোটি দুঃখী সস্তান, তোমরা— ইত্যাদি ইত্যাদি । গোরা এই-সমস্ত লেখা পড়িয়া বিরক্তিতে অস্থির হইয়া পড়িল । কিন্তু অবিনাশকে পারিবার জো নাই। গোরা তাহাকে গালি দিলেও সে গায়ে লয় না, বরঞ্চ খুশি হয়। ‘আমার গুরু অত্যুচ্চ ভাবলোকেই বিহার করেন, এ-সমস্ত পৃথিবীর কথা কিছুই বোঝেন না। তিনি বৈকুণ্ঠবাসী নারদের মতো বীণা বাজাইয়া বিষ্ণুকে বিগলিত করিয়া গঙ্গার স্বষ্টি করিতেছেন, কিন্তু সেই গঙ্গাকে মর্তে প্রবাহিত করিয়া