পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫৬৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গোরা Q& Y সগরসস্তানের ভস্মরাশি সঞ্জীবিত করিবার কাজ পৃথিবীর ভগীরথের— সে স্বর্গের লোকের কর্ম নয় । এই দুই কাজ একেবারে স্বতন্ত্র । অতএব অবিনাশের উৎপাতে গোরা যখন আগুন হইয়া উঠে তখন অবিনাশ মনে মনে হাসে, গোরার প্রতি তাহার ভক্তি বাড়িয়া উঠে । সে মনে মনে বলে, “আমাদের গুরুর চেহারাও যেমন শিবের মতো তেমনি ভাবেও তিনি ঠিক ভোলানাথ । কিছুই বোঝেন না, কাণ্ডজ্ঞানমাত্রই নাই, কথায় কথায় রাগিয়া আগুন হন, আবার রাগ জুড়াইতেও বেশিক্ষণ লাগে না।’ অবিনাশের চেষ্টায় গোরার প্রায়শ্চিত্তের কথাটা লইয়া চারি দিকে ভারি একটা আন্দোলন উঠিয়া পড়িল । গোরাকে তাহার বাড়িতে আসিয়া দেখিবার জন্য, তাহার সঙ্গে আলাপ করিবার জন্য, লোকের জনতা আরও বাড়িয়া উঠিল । প্রত্যহ চারি দিক হইতে তাহার এত চিঠি আসিতে লাগিল যে, চিঠি পড়া সে বন্ধ করিয়াই দিল । গোরার মনে হইতে লাগিল এই দেশব্যাপ্ত অfলোচনার দ্বারা তাহার প্রায়শ্চিত্তের সাত্ত্বিকতা যেন ক্ষয় হইয়া গেল, ইহা একটা রাজসিক ব্যাপার হইয়া উঠিল । ইহা কালেরই দোষ । কৃষ্ণদয়াল আজিকাল খবরের কাগজ স্পর্শও করেন না, কিন্তু জনশ্রুতি র্তাহার সাধনাশ্রমের মধ্যেও গিয়া প্রবেশ করিল । তাহার উপযুক্ত পুত্র গোরা মহাসমারোহে প্রায়শ্চিত্ত করিতে বসিয়াছে এবং সে যে তােহর পিতারই পবিত্র পদাঙ্ক অনুসরণ করিয়া এক কালে তাহার মতোই সিদ্ধপুরুষ হইয়া দাড়াইবে, এই সংবাদ ও এই আশা কৃষ্ণদয়ালের প্রসাদজীবীরা তাহার কাছে বিশেষ গৌরবের সহিত ব্যক্ত করিল। গোরার ঘরে কৃষ্ণদয়াল কতদিন যে পদার্পণ করেন নাই তাহার ঠিক নাই । তাহার পট্টবস্ত্র ছাড়িয়া স্বতার কাপড় পরিয়া আজ একেবারে তাহার ঘরে গিয়া প্রবেশ করিলেন। সেখানে গোরাকে দেখিতে পাইলেন না । চাকরকে জিজ্ঞাসা করিলেন । চাকর জানাইল, গোরা ঠাকুরঘরে আছে। অঁ্যা ! ঠাকুরঘরে তাহার কী প্রয়োজন ? তিনি পূজা করেন। কৃষ্ণদয়াল শশব্যস্ত হইয়া ঠাকুরঘরে উপস্থিত হইয়া দেখিলেন, সত্যই গোরা পূজায় বসিয়া গেছে । কৃষ্ণদয়াল বাহির হইতে ডাকিলেন, “গোরা !” গোরা তাহার পিতার আগমনে আশ্চর্য হইয়া উঠিয়া দাড়াইল । কৃষ্ণদয়াল তাহার সাধনাশ্রমে বিশেষভাবে নিজের ইষ্টদেবতার প্রতিষ্ঠা করিয়াছেন । ইহাদের 9||24