পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫৬৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গোরা (to st একটা যেন আকারহীন দুঃস্বপ্ন তাহাকে পীড়ন করিতেছিল, তাহাকে কোনোমতেই তাড়াইতে পারিতেছিল না । তাহার কেমন এক-রকম মনে হইল কে যেন সকল দিক হইতেই তাহাকে ঠেলিয়া সরাইয়া ফেলিবার চেষ্টা করিতেছে । নিজের একাকিত্ব তাহাকে আজ অত্যন্ত একটা বৃহং কলেবর ধরিয়া দেখা দিল । তাহার সম্মুখে কর্ম ক্ষেত্র অতি বিস্তীর্ণ, কাজও অতি প্রকাগু, কিন্তু তাহার পাশে কেহই দাড়াইয়া নাই । ԳԾ কাল প্রায়শ্চিত্তসভা বসিবে, আজ রাত্রি হক্টতেই গোরা বাগানে গিয়া বাস করিবে এইরূপ স্থির আছে । যখন সে যাত্রা করিবার উপক্রম করিতেছে এমন সময় হরিমোহিনী আসিয়া উপস্থিত । তাহাকে দেখিয়া গোরা প্রসন্নতা অনুভব করিল না । গোরা কহিল, "আপনি এসেছেন— আমাকে যে এখনই বেরোতে হবে— মাও তো কয়েক দিন বাড়িতে নেই । যদি তার সঙ্গে প্রয়োজন থাকে তা হলে—” হরিমোহিনী কহিলেন, “না বাবা, আমি তোমার কাছেই এসেছি— একটু তোমাকে বসতেই হবে— বেশিক্ষণ না ।” গোরা বসিল । হরিমোহিনী স্বচরিতার কথা পাড়িলেন । কহিলেন, গোরার শিক্ষাগুণে তাহার বিস্তর উপকার হইয়াছে। এমন-কি, সে আজকাল যার-তার হাতের ষ্ট্রোওয়া জল খায় না এবং সকল দিকেই তাহার স্বমতি জন্মিয়াছে— ‘বাবা, ওর জন্তেই কি আমার কম ভাবনা ছিল! ওকে তুমি পথে এনে আমার কী উপকার করেছ সে আমি তোমাকে এক মুখে বলতে পারি নে। ভগবান তোমাকে রাজরাজেশ্বর করুন। তোমার কুলমানের যোগ্য একটি লক্ষ্মী মেয়ে ভালো ঘর থেকে বিয়ে করে আনো, তোমার ঘর উজ্জল হোক, ধনেপুত্রে লক্ষ্মীলাভ হোক ’ তাহার পরে কথা পাড়িলেন, স্বচরিতার বয়স হইয়াছে, বিবাহ করিতে তাহার আর এক মুহূর্ত বিলম্ব করা উচিত নয়, হিন্দুঘরে থাকিলে এতদিনে সস্তানের দ্বারা তাহার কোল ভরিয়া উঠিত। বিবাহে বিলম্ব করায় যে কতবড়ো অবৈধ কাজ হইয়াছে সে সম্বন্ধে গোরা নিশ্চয়ই তাহার সঙ্গে একমত হইবেন । হরিমোহিনী দীর্ঘকাল ধরিয়া স্বচরিতার বিবাহসমস্যা সম্বন্ধে অসহ উদবেগ ভোগ করিয়া অবশেষে বহু সাধ্যসাধনা অনুনয়বিনয়ে তাহার দেবর কৈলাসকে রাজি করিয়া কলিকাতায় আনিয়াছেন। যে-সমস্ত গুরুতর বাধাবিক্সের আশঙ্কণ করিয়াছিলেন তাহা সমস্তই ঈশ্বরেচ্ছায় কাটিয়া গিয়াছে। সমস্তই স্থির, বরপক্ষে এক পয়সা পণ পর্যন্ত লইবে না এবং স্বচরিতার