পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫৭৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গোরা Qやめ তাহার সংকল্প ছিল । স্বচরিতার আহার শেষ হইলে হরিমোহিনী কহিলেন, “কাল সন্ধ্যার সময় আমি তোমার গুরুর ওখানে গিয়েছিলুম।” স্বচরিতার অন্ত:করণ কুষ্ঠিত হইয়া পড়িল । মাসি আবার কি তাহার কোনো কথা তুলিয়া তাহাকে অপমান করিয়া আসিয়াছেন ? হরিমোহিনী কহিলেন, “ভয় নেই রাধারানী, আমি তার সঙ্গে ঝগড়া করতে যাই নি। একলা ছিলুম, ভাবলুম যাই তার কাছে, দুটো ভালো কথা শুনে আলিগে । কথায় কথায় তোমার কথাই উঠল । তা দেখলুম, তারও ওই মত। মেয়েমানুষ যে বেশিদিন আইবুড়ো হয়ে থাকে এটা তো তিনি ভালো বলেন না। তিনি বলেন শাসমতে ওটা অধৰ্ম। ওটা সাহেবদের ঘরে চলে, হিন্দুর ঘরে না। আমি তাকে আমাদের কৈলাসের কথাও খুলে বলেছি । দেখলুম লোকটি জ্ঞানী বটে ।” লজ্জায় কষ্টে স্বচরিতা মৰ্মে মরিতে লাগিল । হরিমোহিনী কহিলেন, “তুমি তো তাকে গুরু বলে মানো । তার কথাটা তো পালন করতে হবে।” স্বচরিতা চুপ করিয়া রহিল । হরিমোহিনী কছিলেন, “আমি তাকে বললুম— বাবা, তুমি নিজে এসে তাকে বুঝিয়ে যাও, সে আমাদের কথা মানে না । তিনি বললেন, ‘না, তার সঙ্গে আমার আর দেখা হওয়; উচিত হবে না, ওটা আমাদের হিন্দুসমাজে বাধে । আমি বললুম, তবে উপায় কী? তখন তিনি আমাকে নিজের হাতে লিখে দিলেন । এই দেখো-না ।” এই বলিয়া হরিমোহিনী ধীরে ধীরে আঁচল হইতে কাগজটি খুলিয়া লইয়া তাহার ভাজ খুলিয়া স্বচরিতার সম্মুখে মেলিয়া দিলেন । স্বচরিতা পড়িল । তাহার যেন নিশ্বাস রুদ্ধ হইয়া আসিল । সে কাঠের পুতুলের মতে আড়ষ্ট হইয়া বসিয়া রহিল । লেখাটির মধ্যে এমন কিছুই ছিল না যাহা নূতন বা অসংগত। কথাগুলির সহিত স্বচরিতার মতের ষে অনৈক্য আছে তাহাও নহে। কিন্তু হরিমোহিনীর হাত দিয়া বিশেষ করিয়া এই লিখনটি তাহাকে পাঠাইয়া দেওয়ার যে অর্থ তাহাই স্বচরিতাকে নানাপ্রকারে কষ্ট দিল । গোরার কাছ হইতে এ আদেশ আজ কেন ? অবশু, স্বচরিতারও সময় উপস্থিত হইবে, তাহাকেও একদিন বিবাহ করিতে হইবে— সেজন্য গোরার পক্ষে এত ত্বরান্বিত হইবার কি কারণ ঘটিয়াছে ? তাহার সম্বন্ধে গোরার কাজ একেবারে শেষ হইয়া গেছে ? সে কি গোরার কর্তব্যে কোনো হানি করিয়াছে, তাহার জীবনের পথে কোনো বাধা ঘটাইয়াছে ? তাহাকে গোরার দান করিবার এবং