পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫৮১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গোরা ●ぐが* পূর্বে হইলে ইংরাজ ডাক্তার দেখিবামাত্র গোরার মনে আপনিই একটা বিদ্বেষ উৎপন্ন হইত। আজ যখন ভাক্তার রোগীকে পরীক্ষা করিতেছিল তখন গোরা তাহার প্রতি বিশেষ একটা ঔৎস্থক্যের সহিত দৃষ্টিপাত করিল। নিজের মনকে বার বার করির প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করিতে লাগিল, “এই লোকটাই কি এখানে আমার সকলের চেয়ে আত্মীয় ? ডাক্তার পরীক্ষা করিয়া ও প্রশ্ন করিয়া কহিল, “কই, বিশেষ তো কোনো মন্দ লক্ষণ দেখি না । নাড়ীও শঙ্কাজনক নহে এবং শরীরযন্ত্রেরও কোনো বিকৃতি ঘটে নাই । ষে উপসর্গ ঘটিয়াছে সাবধান হইলেই তাহার পুনরাবৃত্তি হইবে না।” ডাক্তার বিদায় হইয়া গেলে কিছু না বলিয়া গোরা চৌকি হইতে উঠিবার উপক্রম করিল। আনন্দময়ী ডাক্তারের আগমনে পাশের ঘরে চলিয়া গিয়াছিলেন। তিনি দ্রুত আসিয়া গোরার হাত চাপিয়া ধরিয়া কহিলেন, “বাবা, গোরা, আমার উপর তুই রাগ করিস নে— তা হলে আমি আর বঁচিব না !” গোরা কহিল, “তুমি এতদিন আমাকে বল নি কেন ? বললে তোমার কোনো ক্ষতি হ’ত না ।” আনন্দময়ী নিজের ঘাড়ে সমস্ত দোষ লক্টলেন ; কছিলেন, “বাপ, তোকে পাছে হারাই এই ভয়ে আমি এত পাপ করেছি। শেষে যদি তাই ঘটে, তুই যদি আজ আমাকে ছেড়ে যাস, তা হলে কাউকে দোষ দিতে পারব না, গোরা, কিন্তু সে আমার মৃত্যুদণ্ড হবে যে বাপ !” গোরা শুধু কেবল কহিল, “মা !” গোরার মুখে সেই সম্বোধন শুনিয়া এতক্ষণ পরে আনন্দময়ীর রুদ্ধ অশ্রু উচ্ছ্বলিত হইয়া উঠিল । গোরা কহিল, “মা, এখন আমি একবার পরেশবাবুর বাড়ি যাব।” আনন্দময়ীর বুকের ভার লাঘব হইয়া গেল । তিনি কহিলেন, “ষাও বাবা!” তাহার আশু মরিবার আশঙ্কা নাই, অথচ গোরার কাছে কথাটা প্রকাশ হইয়া পড়িল, ইহাতে কৃষ্ণদয়াল অত্যন্ত ত্রস্ত হইয়া উঠিলেন । কহিলেন, “দেখো গোরা, কথাটা কারও কাছে প্রকাশ করবার তো দরকার দেখি নে। কেবল, তুমি একটু বুঝে-স্বঝে বাচিয়ে চললেই যেমন চলছিল তেমনি চলে যাবে, কেউ টেরও পাবে না ।” গোরা তাহার কোনো উত্তর না দিয়া বাহির হইয়া গেল। কৃষ্ণদয়ালের সঙ্গে

  • pop