পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫৮৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

¢ዓe রবীন্দ্র-রচনাবলী ভিতরকার ক্ষেত্র নয়— সে এই বাইরের পঞ্চবিংশতি কোটি লোকের যথার্থ কল্যাণক্ষেত্র ” গোরার এই নবলব্ধ অনুভূতির প্রবল উৎসাহের বেগ পরেশকেও যেন আন্দোলিত করিতে লাগিল, তিনি আর বসিয়া থাকিতে পারিলেন না— চৌকি ছাড়িয়া উঠিয় দাড়াইলেন । গোরা কহিল, "আমার কথা কি আপনি ঠিক বুঝতে পারছেন ? আমি যা দিনরাত্রি হতে চাচ্ছিলুম অথচ হতে পারছিলুম না, আজ আমি তাই হয়েছি। আমি আজ ভারতবর্ষীয় । আমার মধ্যে হিন্দু মুসলমান খৃস্টান কোনো সমাজের কোনো বিরোধ নেই । আজ এই ভারতবর্ষের সকলের জাতই আমার জাত, সকলের অল্পই আমার অন্ন। দেখুন, আমি বাংলার অনেক জেলায় ভ্রমণ করেছি, খুব নীচ পল্লীতেও আতিথ্য নিয়েছি— আমি কেবল শহরের সভায় বক্তৃতা করেছি তা মনে করবেন না— কিন্তু কোনোমতেই সকল লোকের পাশে গিয়ে বসতে পারি নি— এতদিন আমি আমার সঙ্গে সঙ্গেই একটা অদৃত ব্যবধান নিয়ে ঘুরেছি— কিছুতেই সেটাকে পেরোতে পারি নি। সেজন্যে আমার মনের ভিতরে খুব একটা শূন্যতা ছিল । এই শূন্ততাকে নানা উপায়ে কেবলই অস্বীকার করতে চেষ্টা করেছি— এই শূন্যতার উপরে নানাপ্রকার কারুকার্য দিয়ে তাকেই আরও বিশেষরূপ সুন্দর করে তুলতে চেষ্টা করেছি। কেননা, ভারতবর্ষকে আমি যে প্রাণের চেয়ে ভালোবাসি— আমি তাকে যে অংশটিতে দেখতে পেতুম সে অংশের কোথাও যে আমি কিছুমাত্র অভিযোগের অবকাশ একেবারে সহ করতে পারতুম না। আজ সেই-সমস্ত কারুকায বানাবার বৃথা চেষ্টা থেকে নিষ্কৃতি পেয়ে আমি বেঁচে গেছি পরেশবাৰু!” পরেশ কহিলেন, “সত্যকে যখন পাই তখন সে তার সমস্ত অভাব-অপূর্ণতা নিয়েও আমাদের আত্মাকে তৃপ্ত করে— তাকে মিথ্যা উপকরণ দিয়ে সাজিয়ে তোলবার ইচ্ছা भाँङझे झग्न नीं !” গোরা কহিল, “দেখুন পরেশবাবু, কাল রাত্রে আমি বিধাতার কাছে প্রার্থনা করেছিলুম যে, আজ প্রাতঃকালে আমি যেন নূতন জীবন লাভ করি। এতদিন শিশুকাল থেকে আমাকে যে-কিছু মিথ্যা ষে-কিছু অশুচিতা আবৃত করে ছিল আজ যেন তা নিঃশেষে ক্ষয় হয়ে গিয়ে আমি নবজন্ম লাভ করি । আমি ঠিক ষে কল্পনারসামগ্ৰীটি প্রার্থনা করেছিলুম ঈশ্বর সে প্রার্থনায় কর্ণপাত করেন নি— তিনি তার নিজের সত্য হঠাৎ একেবারে আমার হাতে এনে দিয়ে আমাকে চমকিয়ে দিয়েছেন । তিনি যে এমন করে আমার অশুচিতাকে একেবারে সমূলে ঘুচিয়ে দেবেন তা আমি