পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫৮৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গোরা । ¢ጫ> স্বপ্নেও জানতুম না । আজ আমি এমন শুচি হয়ে উঠেছি যে চণ্ডালের ঘরেও আমার আর অপবিত্রতার ভয় রইল না। পরেশবাবু আজ প্রাতঃকালে সম্পূর্ণ অনাবৃত চিত্তখানি নিয়ে একেবারে আমি ভারতবর্ষের কোলের উপরে ভূমিষ্ঠ হয়েছি— মাতৃক্রোড় যে কাকে বলে এতদিন পরে তা আমি পরিপূর্ণভাবে উপলব্ধি করতে পেরেছি।” পরেশ কহিলেন, “গেীর, তোমার মাতৃক্রোড়ে তুমি যে অধিকার পেয়েছ সেই অধিকারের মধ্যে তুমি আমাদেরও আহবান করে নিয়ে যাও।” গোরা কছিল, “আজ মুক্তিলাভ করে প্রথমেই আপনার কাছে কেন এসেছি জানেন ?” পরেশ কহিলেন, "কেন ?” গেীর কহিল, “আপনার কাছেই এই মুক্তির মন্ত্র আছে— সেইজন্তেই আপনি আজ কোনো সমাজেই স্থান পান নি । আমাকে আপনার শিষ্য করুন। আপনি আমাকে আজ সেই দেবতারই মন্ত্র দিন, যিনি হিন্দু মুসলমান খৃস্টান ব্রাহ্ম সকলেরই– র্যার মন্দিরের দ্বার কোনো জাতির কাছে, কোনো ব্যক্তির কাছে, কোনোদিন অবরুদ্ধ হয় না— যিনি কেবলই হিন্দুর দেবতা নন, যিনি ভারতবর্ষের দেবতা ।” পরেশবাবুর মুখের উপর দিয়া একটি ভক্তির গভীর মাধুর্য স্নিগ্ধ ছায়া বুলাইয়া গেল, তিনি চক্ষু নত করিয়া নীরবে দাড়াইয়া রছিলেন । এতক্ষণ পরে গোরা স্বচরিতার দিকে ফিরিল । স্বচরিতা তাহার চৌকির উপরে স্তব্ধ হইয়া বসিয়া ছিল । গোরা হাসিয়া কহিল, “স্বচরিতা, আমি আর তোমার গুরু নই। আমি তোমার কাছে এই বলে প্রার্থনা জানাচ্ছি, আমার হাত ধরে তোমার ওই গুরুর কাছে আমাকে নিয়ে যাও ।” এই বলিয়া গোরা তাহার দিকে দক্ষিণ হস্ত প্রসারিত করিয়া অগ্রসর হইয়া গেল । স্বচরিতা চৌকি হইতে উঠিয়া গিয়া নিজের হস্ত তাহার হাতে স্থাপন করিল। তখন গোরা স্বচরিতাকে লইয়া পরেশকে প্রণাম করিল।