পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫৯৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

লোকসাহিত্য Qbr> প্রবন্ধের নিয়মানুসারে প্রবন্ধ রচনা করিতে হয় ; নিষ্ঠুরতাটুকু অপরিহার্য – যমুনাবতী সরস্বতী, কাল যমুনার বিয়ে । যমুনা যাবেন শ্বশুরবাড়ি কাজিতলা দিয়ে । কাজিফুল কুড়োতে পেয়ে গেলুম মালা । হাত-ঝুম্ ঝুম্ পা-ঝুম্ ঝুম সীতারামের খেলা । নাচে তো সীতারাম কঁাকাল বেঁকিয়ে । আলোচাল দেব টাপাল ভরিয়ে ॥ আলোচাল খেতে খেতে গলা হল কাঠ । হেথায় তো জল নেই, ত্রিপূর্ণির ঘাট । ত্রিপূর্ণির ঘাটে দুটো মাছ ভেসেছে। একটি নিলেন গুরুঠাকুর, একটি নিলেন কে । তার বোনকে বিয়ে করি ওড়ফুল দিয়ে । ওড়ফুল কুড়োতে হয়ে গেল বেলা । তার বোনকে বিয়ে করি ঠিক-দুফুর বেলা । ইহার মধ্যে ভাবের পরস্পর সম্বন্ধ নাই সে কথা নিতান্তই পক্ষপাতী সমালোচককেও স্বীকার করিতে হইবে । কতকগুলি অসংলগ্ন ছবি নিতান্ত সামান্ত প্রসঙ্গসূত্র অবলম্বন করিয়া উপস্থিত হইয়াছে। একটা এই দেখা যাইতেছে, কোনোপ্রকার বাছ-বিচার নাই। যেন কবিত্বের সিংহদ্বারে নিস্তন্ধ শারদ মধ্যাহের মধুর উত্তাপে দ্বারবান বেটা দিব্য পা ছড়াইয়া দিয়া ঘুমাইয়া পড়িয়াছে। কথাগুলো ভাবগুলো কোনোপ্রকার পরিচয়-প্রদানের অপেক্ষা না রাখিয়া, কোনোরূপ উপলক্ষ্য অন্বেষণ না করিয়া, অনায়ালে তাহার পা ডিঙাইয়া, এমন-কি মাঝে মাঝে লঘুকরস্পর্শে তাহার কান মলিয়া দিয়া, কল্পনার অভ্ৰভেদী মায়াপ্রাসাদে ইচ্ছামুখে আনাগোনা করিতেছে— দ্বারবানটা যদি চুলিতে ঢুলিতে হঠাৎ একবার চমক খাইয়া জাগিয়া উঠিত তবে সেই মুহূর্তে ই তাহারা কে কোথায় দেড় দিত তাহার আর ঠিকানা পাওয়া যাইত না । যমুনাবতী সরস্বতী যিনিই হউন আগামী কল্য যে তাহার শুভবিবাহ সে কথার স্পষ্টই উল্লেখ দেখা যাইতেছে। অবশ্য বিবাহের পর যথাকালে কাজিতলা দিয়া যে তাহাকে শ্বশুরবাড়ি যাইতে হইবে সে কথা আপাতত উত্থাপন না করিলেও চলিত ; যাহা হউক, তথাপি কথাটা নিতান্তই অপ্রাসঙ্গিক হয় নাই । কিন্তু বিবাহের জন্য কোনোপ্রকার উদযোগ অথবা সেজন্য কাহারও তিলমাত্র ঔৎসুক্য আছে এমন কিছুই পরিচয় পাওয়া যায় না। ছড়ার রাজ্য তেমন রাজ্যই নহে । সেখানে সকল ব্যাপারই এমন