পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫৯৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

むbr8 রবীন্দ্র-রচনাবলী এক কন্তে রাধেন বাড়েন, এক কন্তে খান । এক কন্তে না খেয়ে বাপের বাড়ি যান ॥ এ বয়সে এই ছড়াটি শুনিবামাত্র বোধ করি প্রথমেই মনে হয়, শিবুঠাকুর যে তিনটি কন্যাকে বিবাহ করিয়াছেন তন্মধ্যে মধ্যম কন্যাটিই সর্বাপেক্ষা বুদ্ধিমতী । কিন্তু এক বয়স ছিল যখন এতাদৃশ চরিত্রবিশ্লেষণের ক্ষমতা ছিল না। তখন এই চারিটি ছত্র আমার বাল্যকালের মেঘদূতের মতো ছিল । আমার মানসপটে একটি ঘনমেঘান্ধকার বাদলার দিন এবং উত্তালতরঙ্গিত নদী মূর্তিমান হইয়া দেখা দিত। তাহার পর দেখিতে পাইতাম সেই নদীর প্রাস্তে বালুর চরে গুটিদুয়েক পানসি নৌকা বাধা আছে এবং শিবুঠাকুরের নববিবাহিতা বধূগণ চড়ায় নামিয়া রাধাবাড়া করিতেছেন । সত্য কথা বলিতে কি, শিবুঠাকুরের জীবনটিকে বড়ো মুখের জীবন মনে করিয়া চিত্ত কিছু ব্যাকুল হইত। এমনকি, তৃতীয়া বধূঠাকুরানী মর্মস্তিক রাগ করিয়া দ্রুতচরণে বাপের বাড়ি অভিমুখে চলিয়াছেন, সেই ছবিতেও আমার এই স্বখচিত্রের কিছুমাত্র ব্যাঘাত সাধন করিতে পারে নাই । এই নির্বোধ তখনও বুঝিতে পারিত না ওঠ একটিমাত্র ছত্রে হতভাগ্য শিবুঠাকুরের জীবনে কী এক হৃদয়বিদারক শোকাবহ পরিণাম স্থচিত হইয়াছে। কিন্তু পূর্বেই বলিয়াছি, চরিত্রবিশ্লেষণ অপেক্ষা চিত্রবিরচনের দিকেই তখন মনের গতিটা ছিল । এখন বুঝিতে পারিতেছি, হতবুদ্ধি শিবুঠাকুর তদীয় কনিষ্ঠজায়ার অকস্মাং পিতৃগৃহপ্রয়াণ-দৃশ্যটিকে ঠিক মনোরম চিত্র হিসাবে দেখেন নাই । এই শিবুঠাকুর কি কস্মিন কালে কেহ ছিল, এক-একবার এ কথাও মনে উদয় হয়। হয়তো বা ছিল । হয়তো এই ছড়ার মধ্যে পুরাতন বিশ্বত ইতিহাসের অতিক্ষুদ্র এক ভগ্ন অংশ থাকিয়া গিয়াছে । আর-কোনো ছড়ায় হয়তো বা ইহার আর-এক টুকরা থাকিতে পারে। এ পার গঙ্গা, ও পর গঙ্গা, মধ্যিখানে চর । তারি মধ্যে বসে আছে শিব সদাগর । শিব গেল শ্বশুরবাড়ি, বসতে দিল পিড়ে। জলপান করিতে দিল শালিধানের চিড়ে । শালিধানের চিড়ে নয় রে, বিন্নিধানের খই। মোটা মোটা সৰ্বরি কলা, কাগমারে দই । ভাবে-গতিকে আমার সন্দেহ হইতেছে শিবুঠাকুর এবং শিৰুসাগর লোকটি একই হইবেন। দাম্পত্য সম্বন্ধে উভয়েরই একটু বিশেষ শখ আছে এবং বোধ করি আহার