পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫৯৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

লোকসাহিত্য ©br☾ সম্বন্ধেও অবহেলা নাই। উপরন্তু গঙ্গার মাঝখানটিতে যে স্থানটুকু নির্বাচন করিয়া লওয়া হইয়াছে তাহাও নবপরিণীতের প্রথম প্রণয়যাপনের পক্ষে অতি উপযুক্ত স্থান । এই স্থলে পাঠকগণ লক্ষ করিয়া দেখিবেন, প্রথমে অনবধানতাক্রমে শিবুসদাগরের জলপানের স্থলে শালিধানের চিড়ার উল্লেখ করা হইয়াছিল, কিন্তু পরক্ষণেই সংশোধন করিয়া বলা হইয়াছে শালিধানের চিড়ে নয় রে বিন্নিধানের খই’ । যেন ঘটনার সত্য সম্বন্ধে তিলমাত্র স্খলন হইবার জো নাই। অথচ এই সংশোধনের দ্বারা বর্ণিত ফলাহারের খুব যে একটা ইতরবিশেষ হইয়াছে, জামাই-আদর সম্বন্ধে শ্বশুরবাড়ির গৌরব খুব উজ্জ্বলতররূপে পরিস্ফুট হইয়া উঠিয়াছে তাহাও বলিতে পারি না। কিন্তু এ ক্ষেত্রে শ্বশুরবাড়ির মর্যাদা অপেক্ষা সত্যের মর্যাদা রক্ষার প্রতি কবির অধিক লক্ষ দেখা যাইতেছে। তাও ঠিক বলিতে পারি না । বোধ করি ইহাও স্বপ্নের মতে । বোধ করি শালিধানের চিড়া দেখিতে দেপিতেই পরমুহূর্তে বিন্নিধানের খই হইয়া উঠিয়াছে। বোধ করি শিবুঠাকুরও কখন এমন করিয়া শিৰুসদাগরে পরিণত হইয়াছে কেহ বলিতে পারে না । শুনা যায় মঙ্গল ও বৃহস্পতির কক্ষ-মধ্যে কতকগুলি টুকরা গ্রহ আছে। কেহ কেহ বলেন একখানা আস্ত গ্রহ ভাঙিয়া খণ্ড খণ্ড হইয়া গিয়াছে । এই ছড়াগুলিকেও সেইরূপ টুকরা জগং বলিয়া আমার মনে হয়। অনেক প্রাচীন ইতিহাস প্রাচীন স্মৃতির চূর্ণ অংশ এই-সকল ছড়ার মধ্যে বিক্ষিপ্ত হইয়া আছে, কোনো পুরাতত্ত্ববিং আর তাহাদিগকে জোড়া দিয়া এক করিতে পfরেন না, কিন্তু আমাদের কল্পনা এই ভগ্নাবশেষগুলির মধ্যে সেই বিশ্বত প্রাচীন জগতের একটি হুদুর অথচ নিকট পরিচয় লাভ করিতে চেষ্টা করে । অবশ্য বালকের কল্পনা এই ঐতিহাসিক ঐক্য রচনার জন্য উৎসুক নহে। তাহার নিকট সমস্তই বর্তমান এবং তাহার নিকট বর্তমানেরই গৌরব । সে কেবল প্রত্যক্ষ ছবি চাহে এবং সেই ছবিকে ভাবের অশ্রুবাম্পে ঝাপসা করিতে চাহে না । নিম্নোদধুত ছড়াটিতে অসংলগ্ন ছবি যেন পাখির বাকের মতো উড়িয়া চলিয়াছে । ইহাদের প্রত্যেকের এই স্বতন্ত্র দ্রুতগতিতে বালকের চিত্ত উপরযুপরি নব নব আঘাত পাইয়া বিচলিত হইতে থাকে । নোটন নোটন পায়রাগুলি বোটন রেখেছে। বড়ো সাহেবের বিবিগুলি নাইতে এসেছে । দু পারে দুই রুই কাংলা ভেসে উঠেছে। দাদার হাতে কলম ছিল জুড়ে মেরেছে।