পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৬০৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

লোকসাহিত্য Q>> দাদার বেতন অধিক নহে— কিন্তু বোনটির মতে তাহাই প্রচুর। এই তিন টাকা বেতনের সচ্ছলতার উদাহরণ দিয়াই ভগ্নীটি অনুনয় করিতেছেন— হেই দাদা তোমার পায়ে পড়ি । বড এনে দাও খেলা করি । চতুরা বালিকা নিজের এই স্বাৰ্থ-উদ্ধারের জন্য দাদাকেও প্রলোভনের ছলে আভাস দিতে ছাড়ে নাই যে ‘বউ বরনে চন্দ্রকলা' । যদিও ভগ্নীর খেলেনাটি তিন টাকা বেতনের পক্ষে অনেক মহাৰ্ঘ্য তথাপি নিশ্চয় বলিতে পারি তাহার কাতর অনুরোধ রক্ষণ করিতে বিলম্ব হয় নাই, এবং সেটা কেবলমাত্র সৌভ্রাত্রবশত নহে । উলু উলু মাদারের ফুল । বর আসছে কত দূর । বর আসছে বাঘৃনাপাড়া । বড় বউ গো রান্না চড়া ॥ ছোটো বউ লো জলকে যা । জলের মধ্যে দ্যাকাজোকা । ফুল ফুটেছে চাকা চাকা । ফুলের বরণ কড়ি । নটে শাকের বড়ি । জামাতৃসমাগমপ্রত্যাশিনী পল্লীরমণীগণের ঔৎসুক্য এবং আনন্দ-উৎসবের ছবি আপনি ফুটিয়া উঠিয়াছে । এবং সেই উপলক্ষ্যে শেওড়াগাছের-বেড়া-দেওয়া পাড়াগায়ের পথঘাট বন পুষ্করিণী ঘটকক্ষবধূ এবং শিথিলগুণ্ঠন ব্যস্তসমস্ত গৃহিণীগণ ইন্দ্রজালের মতো জাগিয়া উঠিয়াছে। এমন প্রায় প্রত্যেক ছড়ার প্রত্যেক তুচ্ছ কথায় বাংলাদেশের একটি মূর্তি, গ্রামের একটি সংগীত, গৃহের একটি আস্বাদ পাওয়া যায়। কিন্তু সে-সমস্ত অধিক পরিমাণে উদ্ভূত করিতে আশঙ্কা করি, কারণ, ভিন্নরুচিৰ্হি লোকঃ। ছবি যদি কিছু অদ্ভূত-গোছের হয় তাহাতে কোনো ক্ষতি নাই, বরঞ্চ ভালোই । কারণ, নূতনত্বে চিত্তে আরও অধিক করিয়া আঘাত করে। ছেলের কাছে অদ্ভূত কিছু নাই ; কারণ, তাহার নিকট অসম্ভব কিছু নাই। সে এখনো জগতে সম্ভাব্যতার শেষসীমাবতী প্রাচীরে গিয়া চারি দিক হইতে মাথা ঠুকিয়া ফিরিয়া আলে নাই । সে বলে, যদি কিছুই সম্ভব হয় তবে সকলই সম্ভব। একটা জিনিস যদি অদ্ভুত না হয় তবে আর-একটা জিনিসই বা কেন অদ্ভূত হইবে ? সে বলে,