পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৬০৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

লোকসাহিত্য (tఏరి চাহিতে অনুরোধ করার মধ্যেও বিস্তর রস আছে । যেমন মিষ্ট ছন্দ শুনিলেই তfহাকে গানে বধিয়া গাহিতে ইচ্ছা করে তেমনি এই-সকল ভাষার চিত্র দেখিলেই ইহুদিগকে রেখার চিত্রে অনুবাদ করিয়া আঁকিয়া ফেলিতে ইচ্ছা করে । কিন্তু হায়, এ-সকল চিত্রের রস নষ্ট না করিয়া ইহাদের বাল্য সরলতা, উজ্জল নবীনতা, অসংশয়তা, অসম্ভবের সহজ সম্ভবত রক্ষা করিয়া আঁকিতে পারে এমন চিত্রকর আমাদের দেশে কোথায় এবং বোধ করি সর্বত্রই দুর্লভ । থোকা যাবে মাছ ধরতে ক্ষীরনদীর কুলে । ছিপ নিয়ে গেল কোলা ব্যাঙে, মাছ নিয়ে গেল চিলে । থোকা বলে পাখিটি কোন বিলে চরে। থোকা ব'লে ডাক দিলে উড়ে এসে পড়ে । ক্ষীরনদীর কূলে মাছ ধরিতে গিয়া খোকা যে কী সংকটেই পড়িয়াছিল তাহা কি তুলি দিয়া না আঁকিলে মনের ক্ষোভ মেটে ? অবশু, ক্ষৗরনদীর ভূগোলবৃত্তাস্ত থোকাবাবু আমাদের অপেক্ষ অনেক ভালো জানেন সন্দেহ নাই ; কিন্তু যে নদীতেই হউক, তিনি যে প্রাজ্ঞোচিত ধৈর্মাবলম্বন করিয়া পরম গম্ভীরভাবে নিজ আয়তনের চতুর্গুণ দীর্ঘ এক ছিপ ফেলিয়া মাছ ধরিতে বসিয়াছেন তাহাই যথেষ্ট কৌতুকাবহ, তাহার উপর যখন জল হইতে ড্যাবা চক্ষু মেলিয়া একটা অত্যন্ত উংকট-গোছের কোলা ব্যাঙ থোকার ছিপ লইয়া টান মারিয়াছে এবং অন্য দিকে ডাঙা হইতে চিল আসিয়া মাছ ছে৷ মারিয়া লইয়া চলিয়াছে, তখন তাহার বিব্রত বিম্বিত ব্যাকুল মুখের ভাব—একবার বা প্রাণপণ শক্তিতে পশ্চাতে ঝুকিয়া পড়িয়া ছিপ লইয়া টানাটানি, একবার বা সেই উড্ডীন চেীরের উদ্দেশে দুই উৎসুক ব্যগ্র হস্ত উর্ধ্বে উৎক্ষেপ— এ-সমস্ত চিত্র মুনিপুণ সহৃদয় চিত্রকরের প্রত্যাশায় বহুকাল হইতে প্রতীক্ষা করিতেছে । আবার খোকার পক্ষীমূর্তিও চিত্রের বিষয় বটে। মস্ত একটা বিল চোখে পড়িতেছে। তাহার ও পারটা ভালো দেখা যায় না । এ পারে তীরের কাছে একটা কোণের মতো জায়গায় বড়ো বড়ো ঘাস, বেতের ঝাড় এবং ঘন কচুর সমাবেশ ; জলে শৈবাল এবং নালফুলের বন ; তাহারই মধ্যে লম্বচষ্ণু দীর্ঘপদ গম্ভীর প্রকৃতি ধ্যানপরায়ণ গোটকতক বক-লারসের সহিত মিশিয়া খোকাবাবু ডানা গুটাইয়া নতশিরে অত্যন্ত নিবিষ্টভাবে চরিয়া বেড়াইতেছেন এ দৃশুটিও বেশ এবং বিলের অনতিদূরে ভাদ্রমাসের জলমগ্ন পকশীর্ষ ধান্তক্ষেত্রের সংলগ্ন একটি কুটির ; সেই কুটিরপ্রাঙ্গণে বাশের বেড়ার উপরে বাম হস্ত রাখিয়া দক্ষিণ হস্ত বিলের অভিমুখে সম্পূর্ণ প্রসারিত করিয়া